কেবল ‘বিগ বাজেটের থিমপুজো’-ই নয়, শহরে এমন অনেক বাড়ির পুজো রয়েছে সেখানে আভিজাত্য ও সাবেকিয়ানার ছোঁয়া চোখে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ নয়া চমক; উত্তর কলকাতার স্টেইনলেস স্টিলের দুর্গা
বাবুপাড়ার চক্রবর্তীবাড়ির পুজো: অবিভক্ত বাংলার ঢাকার বিক্রমপুরে চক্রবর্তীবাড়ির পুজোর সূচনা হয়। সেখানেই ১৬০ বছর ধরে পুজো চলে আসছিল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ঠিক আগের বছর ১৯০৪ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র চক্রবর্তী কলকাতার কাছে ভদ্রেশ্বরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন। বেশ কয়েক বছর পুজো চলার পর মাঝে কিছু কারণবশত সেই পুজো বন্ধ ছিল। তবে সেই চক্রবর্তীবাড়ির এখনকার প্রজন্ম পেশার আইনজীবী দীপোজ্যোতি চক্রবর্তী শিলিগুড়িতে ফের পুজোর সূচনা করেছেন। প্রতি বছরই নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো হয়ে আসছে।
দীপোজ্যোতি কর্মসূত্রে শিলিগুড়ির বাসিন্দা হয়ে ওঠার পর শেষ দশ বছর ধরে বাবুপাড়ায় দূর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন। এই পুজো আয়োজনের পিছনে দীপোজ্যোতির স্ত্রী শ্রাবণীর ভূমিকাও যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত আগত দর্শনার্থীদের জন্য নিরামিষ ভোজনের আয়োজন করা হয়। দশমীর দিন থাকে আমিষ আহার। পরিবেশ সচেতনতার বার্তাও বহন করে এই বাড়ির পুজো। দর্শনার্থীদের মধ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের গাছের চারা বিতরণ করা হয় পুজোর দিনগুলিতে। পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষদের বস্ত্র বিতরণও করা হয়।
দেশবন্ধুপাড়ার সাহাবাড়ির পুজো: ৪৩ বছর ধরে দেশবন্ধুপাড়ায় ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ির কাছে পৈতৃক ভিটেতেই সাহাবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। বাড়ির বাসিন্দা পুষ্পল সাহার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর বাবা এবং তাঁর তিন কাকা মিলে এই পুজোর আয়োজন করেন। ৪৩ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী রুদ্র পাল। প্রতিবছর মহালয়াতে কলকাতা থেকে তাঁদের বাড়িতে প্রতিমা চলে আসে। যদিও এই বছর মহালয়ার একদিন আগেই প্রতিমা বাড়িতে চলে এসেছে। অষ্টমীর দিন আগত প্রত্যেককে ভোগপ্রসাদ ও দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
হাকিমপাড়ার চুনী পরিবারের পুজো: খেলাঘর মোড় থেকে জ্যোত্স্না বেকারির দিকে এগোতে গেলে ডানহাতে প্রথম গলিতে শংকর পালের বাড়ি। এই বাড়িতেই পাঁচ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এই পুজোটি হাকিমপাড়ার চুনী পরিবারের পুজো হিসাবে পরিচিত।
পুজোকে কেন্দ্র করে তোরণ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। রোশনাইয়ে সেজে উঠেছে গলির পথ। পুজোর চারদিন শুধু পরিবারের সদস্যরাই নন, পাড়ার বাসিন্দারাও উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন। বাড়ির মেয়ে ইন্দ্রাণী পালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর ঠাকুমা রাধারানি পালের ইচ্ছে ছিল, তাঁদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হোক। তাঁর স্মৃতিতেই মূলত এই পুজোর আয়োজন করা হয়। প্রচুর লোকসমাগম ঘটে এই পুজোতে। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত আগত দর্শনার্থীদের জন্য আহারের আয়োজন করা হয়। রান্না করে প্রায় ষাট থেকে পঞ্চাশজনের একটি দল। বাড়িতে লাড্ডু তৈরি করে তা বিতরণ করা হয়। পুজোর মধ্যে দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণও করা হয়। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারে পুজোর চারদিনই উপস্থিত থাকবেন মুর্শিদাবাদের টগর বাজনার বাদকরা ও হলদিবাড়ি থেকে আসা ঢাকিরা।
আরও পড়ুনঃ মণ্ডপে মণ্ডপে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে; শক্তি, সাহস আর সমৃদ্ধির প্রতীক ভেটাগুড়ির লাল দুর্গা
এই ক’টি পুজোই নয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আরও বেশ কিছু বাড়ির পুজো হয়, যেখানে একাত্মবোধের অনুভূতি ফুটে ওঠে। এগুলির মধ্যে রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে হওয়া হাকিমপাড়ার দুর্গাবাড়ির পুজো ও এবারেই প্রথম আয়োজিত সুব্রত ঘোষের বাড়ির দুর্গাপুজো।