সৌমেন মুখোপাধ্যায়
রাতের ঘুম হারানো চোখে চারদিক আবছা দেখতে থাকে সঞ্জয় ব্যানার্জী। সে এক অফিসের কনড্রাকচুয়েল স্টাফ, কম বেতন। দিনরাত এক করে কাজ করে। অফিসের বসের নির্দেশ সব কাজ শেষ হলে তবেই যাবে। সঞ্জয় সব কাজ যথাসময়ে শেষ করা সত্ত্বেও তার মনে কোন শান্তি নেই। একদিন অফিসের বস তাকে ডেকে বলেন, “সঞ্জয়, তুমি কেন কাজ করছো না ? এমন করে আমি তোমাকে রাখতে পারবো না।”
আরও পড়ুন: আজ সোমবার কী আছে কোন রাশির ভাগ্যে?
অফিসের বসের কথা শুনে সঞ্জয়ের মুখে কোন ভাষা আসে না, সে কি করবে না করবে বুঝতে পারে না। তাই সে সেইদিন প্রতিদিনের মতো রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ীর দিকে রওনা হবে এমন সময় বস এসে আবার বলেন, “তোমার কাজের প্রতি আমি সন্তুষ্ট নয়। তুমি …”, বসের বাকি কথা শুনার মতো তখন তার মাথায় কিছুই কাজ দিচ্ছিল না, তাই সে সোজা রাস্তায় নামে। সদ্য সদ্য সে এক বড়ো পারিবারিক সমস্যা থেকে উদ্ধার হয়েছে। নিজের অর্ধাঙ্গিনী পরিকিনী হয়ে তার বাপের বাড়ী থেকে না এসে তার নামে মিথ্যা মামলা করে। সে মামলা থেকে সঞ্জয় কোনোরকমে বেঁচে যায়। কিন্তু, তার মনে এখনও একটা হারানোর ভয় থেকে গেছে। এবার তার কাজ হারানোর ভয়। এবার অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালাতে গিয়ে এক পাহাড়ের খালে একসিডেন্ট হয়ে পড়ে যায়। বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যায়। হেলমেট পরা অবস্থায় মাথা ফেটে রক্ত জলের স্রোতের মতো বইতে থাকে। ডান পায়ের উপর গাড়ী পড়ায় পা ভেঙে যায়, ডান হাতও ভেঙে যায়।
সেই রাস্তা দিয়ে এক পথযাত্রী সেইসময় যাবার সময় দেখতে পেয়ে আশেপাশে ডাকাডাকি করে লোক জড়ো করো সঞ্জয়কে ধরাধরি করে কাছাকাছি হাসপাতাল অচিন্তপুর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। এত রাত অবধি ছেলে বাড়ীতে না ফেরায় সঞ্জয়ের বিধবা মা জানকীদেবী খুবই চিন্তায় থাকে। একসময় তার মোবাইলে ফোন আসে,এক অচেনা কন্ঠস্বর, বলে, “আপনার ছেলের বাইক একসিডেন্ট হয়। আমরা তাকে অচিন্তপুর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন চিকিৎসা চলছে।”
ছেলের এতোবড় এক দুর্ঘটনার পর আর এক দুর্ঘটনার কথা শুনে জানকীদেবী নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যান।
আরও পড়ুন: দুবাই থেকে লন্ডনের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী
হাসপাতালে জানকীদেবী ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন, ছেলের মাথা ফেটে গেছে, ডান হাত ও ডান পা ভেঙে গেছে। বাঁ পা ও বাঁ হাতের অবস্থা খুবই খারাপ। হন্তদন্ত হয়ে এক নার্স এসে বললেন, “রোগীর ঘরের কে এসেছেন? রোগীর এখনই রক্ত দরকার। বি পজিটিভ। ”
জানকীদেবী বললেন, “কত বোতল রক্ত দরকার?”
নার্স বললেন, “এখন জানি না। তবে এখনই রক্ত দরকার। ”
জানকীদেবী পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে থাকেন। নিরাশ হয়ে একটা বেঞ্চের উপর কাঁদতে থাকেন।
সকালবেলায় দুজন লোক একটা মৃতদেহকে সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে হাসপাতালের এক কোনে রেখে জানকীদেবীকে বললেন, “লাশটা নিয়ে যেতে হলে ডাক্তারবাবুর সাথে দেখা করে যাবেন। ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ফর্ম ফিলাপ করবেন। ”
জানকীদেবী মৃতদেহটার উপর সাদা কাপড়টা সরিয়ে দেহটাকে জড়িয়ে মনের হাজার ব্যথা জড়ানো কান্নায় ভেঙে পড়েন।।