পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পালিত হয় এক বিশেষ রীতি, যাকে বলা হয় ‘বুড়ো অরন্ধন’। রীতি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শেষ রাতে রান্না করে রাখা খাবার আশ্বিনের প্রথম দিনে খাওয়া হয়। প্রতি বছর বাঙালির ঘরে দু’বার অরন্ধন পালিত হয়। একবার মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে, আরেকবার ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর সময়। তবে অনেক পরিবারে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনও এই অরন্ধন উৎসব পালন করা হয়। ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া বলেই এর আরেক নাম ‘ভাদ্রের অরন্ধন’। এ বছর রান্না করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর এবং খাওয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন।
আরও পড়ুনঃ বর্ষাতো দরাজ, কিন্তু রান্না পুজোর জন্য পদ্মার ইলিশ কই? হতাশ এপারের বাঙালি
অরন্ধনের আগের দিন অর্থাৎ ভাদ্র সংক্রান্তির রাতে নানা পদ রান্না হয়। ইলিশ মাছ ও পান্তা ভাত থাকে প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া আলু, কুমড়ো, কলা, পটল, নারকেল, বেগুন ভাজা সহ ৫ থেকে ৯ প্রকার ভাজা, অরহর ডাল, কচুশাক, চালকুমড়োর ঘণ্ট, চালতার টক, এমনকি কোথাও কোথাও চিংড়ির পদও রান্না হয়। নিয়ম অনুযায়ী, রান্নার আগে গৃহস্থ-গৃহিণীরা স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরে মা মনসাকে স্মরণ করে রান্নায় বসেন। রান্না শেষ হলে খাবার ফ্রিজে রাখা যায় না। দেবী মনসাকে নিবেদন করে সব খাবার উনুনের পাশে রেখে দিতে হয়। ভাতকে সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখা হয়।
রান্নার পরের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কোনও রান্না হয় না। এটিই হলো অরন্ধনের মূল নিয়ম। সেদিন আগুন জ্বালানো বারণ। উনুনের পাশে আঁকা হয় পাঁচটি সাপ ও পাঁচটি পদ্ম, বসানো হয় ফণিমনসার ডাল। প্রসাদ হিসেবে দুধ, কলা সাজিয়ে দেওয়া হয়। গৃহস্থেরা মা মনসাকে নিবেদন করার পর আগের দিনের রান্না, পান্তা ভাতসহ অন্যান্য পদ গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুনঃ খেলা শুরু মঙ্গলেই! বজরংবলীর কৃপায় ভাগ্য বদলাবে কোন কোন রাশির?
আগে গৃহস্থরা তিথি অনুযায়ী ভাদ্র সংক্রান্তির রাতে রান্না করতেন এবং আশ্বিন মাস পড়লে তবেই সেই বাসী খাবার খেতেন। কারও কারও বাড়িতে এটি ‘ইচ্ছারান্না’, কোথাও ‘ধরাটে রান্না’, আবার কোথাও ‘আটাশে রান্না’ নামে পালিত হয়। প্রথা অনুযায়ী পাকশালের উনুনকেই মা মনসার প্রতীক হিসেবে ধরা হত। যদিও আজকাল উনুনের পরিবর্তে গ্যাসকেই এর প্রতীকী হিসেবে পুজো করা হয়। পরিবারের মঙ্গলের জন্য ও সর্পভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গৃহিণীরা রান্নাঘরে শালুক বা ফণিমনসা গাছের ডাল দিয়ে মনসার ঘট স্থাপন করেন। সব মিলিয়ে, ‘বুড়ো অরন্ধন’ শুধুমাত্র রান্না বা খাওয়ার রীতি নয়, এটি এক প্রাচীন ব্রত, যেখানে গৃহস্থের সমৃদ্ধি, পরিবারের মঙ্গল এবং দেবী মনসার প্রতি ভক্তিই মুখ্য স্থান পেয়েছে।