প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকের বাস। বাস করেন কলকাতা হাই কোর্ট-সহ অন্যান্য আদালতের বর্তমান এবং প্রাক্তন বিচারপতি এবং বিচারকেরাও। আমৃত্যু বিধাননগরে থেকেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এখনও সেখানকার বাসিন্দা রাজ্যের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দলের প্রথম সারির রাজনীতিকেরা।
আরও পড়ুনঃ ‘হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা মৌলিক অধিকার নয়’, জানিয়ে দিলো সুপ্রিম কোর্ট; ‘আরাত্তাই’ ব্যবহারের পরামর্শ
এ হেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ‘অফিশিয়াল’ ওয়েবসাইটে মোট ১৫টি থানার নাম, যোগাযোগের নম্বর (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ল্যান্ড এবং মোবাইল) এবং ইমেল আইডি দেওয়া আছে। সংশ্লিষ্ট থানার অধীনে কতটা এলাকা রয়েছে, প্রয়োজনে তা-ও দেখে নিতে পারেন যে কেউ। ঘটনাচক্রে, ১৪টি থানাতেই মোবাইল নম্বর ‘নাগালের বাইরে’। একমাত্র ব্যতিক্রম নিউ টাউন জ়োনের নারায়ণপুর।
থানার ল্যান্ড নম্বরগুলি অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালু আছে। তবে এ ক্ষেত্রেও ‘ব্যতিক্রম’ বাগুইআটি থানা। ওই থানার ল্যান্ড নম্বরে ফোন ঢোকেনি! ফোন করলে বলা হচ্ছে, ‘নম্বরটি এখনও রেজিস্টার্ড (নথিভুক্ত) হয়নি’। এ ছাড়া, এনএসসিবিআই এয়ারপোর্ট থানায় কোনও ল্যান্ড নম্বর নেই। অর্থাৎ, মহিলা থানার পাশাপাশি বাগুইআটি এবং এনএসসিবিআই এয়ারপোর্ট থানার সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগের উপায় নেই! বিপন্ন মহিলাদের ‘হেল্পলাইন নম্বর’ হিসাবে রয়েছে একটি ল্যান্ড নম্বর। তাতেও ফোন লাগছে না। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে হয় সশরীরে থানায় যেতে হবে, নয়তো ইমেল করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সাতসকালে বাইকের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে দেহ, চমকে গেলেন বাসিন্দারা
গত শনিবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিধাননগর কমিশনারেটের ওয়েবসাইট অনুযায়ী থানায় থানায় ফোন করে দেখেছেন আনন্দবাজার ডট কম-এর সাংবাদিক। রবিবার ছাড়া সোমবার সকাল থেকে আবার চেষ্টা করা হয় সেই একই মোবাইল নম্বরগুলিতে। সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে, ১১টা ২০ মিনিটে এবং বেলা ১টা ১৯ মিনিটে তিন বার মহিলা থানায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মহিলাদের জন্য দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন লাগেনি। রাস্তাঘাটে বিপদে পড়লে থানার নম্বর খোঁজার সবচেয়ে সহজ উপায় পুলিশের ওয়েবসাইট। কেন দিনের পর দিন সেখানে ‘ভুল’ নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে, কেন বিকল্প কোনও উপায় বাতলে দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে বিধাননগরে।
দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, ওই তরুণী রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়েছিলেন। তখনই ‘নির্যাতনের’ শিকার হন। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের উচিত পড়ুয়াদের, বিশেষত ছোট মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে না-দেওয়া। বাইরে থেকে যাঁরা এ রাজ্যে পড়তে আসেন, তাঁদেরও রাতে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কলকাতার উপকণ্ঠে বিধাননগর বহু কলেজ এবং অফিসের ঠিকানা। অনেক অফিসেই রাত পর্যন্ত কাজ চলে। মহিলা কর্মীদের রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। দুর্গাপুরের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট নির্যাতিতা? পুলিশি সহযোগিতা মিলবে? মোবাইল চালু নেই। ল্যান্ড নম্বর ধরার জন্য ফোনের ও পারে পুলিশ থাকবে তো? গত শনিবার এবং সোমবারের অভিজ্ঞতা এমত প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।