মৃত্যু হয়েছে পর্ন চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় মুখ এবং নেটফ্লিক্সের রিয়্যালিটি শোয়ের প্রতিযোগী কাইলি পেজের। গত ২৫ জুন লস অ্যাঞ্জেলসে মারা গিয়েছেন তিনি। মৃত্যুর সময় কাইলির বয়স হয়েছিল ২৮।
২৫ জুন হলিউডের বাড়িতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় কাইলি পাইলান্টের দেহ। তাঁর এক বন্ধু উদ্বিগ্ন হয়ে পুলিশে খবর দেন। কিন্তু সাহায্য পৌঁছোনোর আগেই মৃত্যু হয় কাইলির।
সংবাদমাধ্যম টিএমজ়েড-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তকারীরা মনে করছেন অতিরিক্ত মাদকসেবনের কারণে মৃত্যু হয়েছে কাইলির। ঘটনাস্থলে ফেন্টানিল এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে, অপরাধমূলক কোনও ঘটনা কাইলির সঙ্গে ঘটেনি।
কাইলির মৃত্যুতে প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদন জগতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রযোজনা সংস্থা ব্রেজ়ার্সের সঙ্গে একাধিক পর্ন ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কাইলি।
আরও পড়ুন: চুপিসারে তিন পাক সেনা অফিসার! গৃহযুদ্ধ সময়ের অপেক্ষা!
প্রযোজনা সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘তাঁর হাসির জন্য কাইলি আমাদের মনে থেকে যাবেন। তিনি যেখানেই যান না কেন, স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা ওঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’
২০১৬ সালে নীল ছবির দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন কাইলি। দ্রুত খ্যাতির শিখরে ওঠেন। ২০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ব্রেজ়ার্স, ভিক্সেন মিডিয়া গ্রুপ এবং নটি আমেরিকা-সহ তাবড় পর্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন।
কাইলির অকালমৃত্যু বিনোদন জগতে মাদকসেবনে মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। উল্লেখ্য, কাইলির বাড়ি থেকে ফেন্টানিল নামে যে মাদক উদ্ধার হয়েছে তা হেরোইনের চেয়েও ভয়ঙ্কর। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে ফেন্টানিল সেবনের কারণে।
২০১৬ সালে অতিরিক্ত ফেন্টানিল সেবনের কারণে মৃত্যু হয় গ্র্যামিবিজয়ী শিল্পী প্রিন্সের। ২০১৮ সালে র্যাপার ম্যাক মিলার মারা যান ফেন্টানিল মেশানো বড়ি খাওয়ার পরে।
২০২১ সালে একই কারণে ব্রুকলিনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অভিনেতা মাইকেল কে উইলিয়ামসের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এ বছরের শুরুতে নেটপ্রভাবী ইভা ইভান্সের মৃত্যুও ফেন্টানিল খাওয়ার জন্য হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
ফেন্টানিল হল একটি অনুমোদিত শক্তিশালী সিন্থেটিক ওপেড ড্রাগ, যা ব্যথাবেদনা উপশমে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেই মাদকই এখন আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হেরোইনের তুলনায় ৫০ গুণ শক্তিশালী ফেন্টানিল। এই মাদকের উৎপাদনমূল্যও অনেক কম। আমেরিকায় ২০২৩ সালে অতিরিক্ত ফেন্টানিল সেবনের কারণে ৭৫ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে।
বেদনানাশক এবং রোগীকে অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত এই ওষুধ মরফিনের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ শক্তিশালী। ওয়াশিংটনের একটি সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ফেন্টানিল সেবনের কারণে আমেরিকায় প্রতি দিন গড়ে ২০০ জনের মৃত্যু হয়। ক্রেতাদের অজান্তেই হেরোইন বা কোকেনের মতো ফেন্টানিলও অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে মিশিয়ে নেশা ধরানো হয়।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের মোদি; দমদমে হতে পারে সভা
অবৈধ ভাবে তৈরি ফেন্টানিলের অতিরিক্ত সেবন বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। ফেন্টানিলের সামান্য পরিমাণ, এমনকি মাত্র দুই মিলিগ্রামও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যদি তা অন্য ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
ফেন্টানিলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে আমেরিকার সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও মাদক সরবরাহ এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। মাদকটি মূলত বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্র, খেলনা-সহ অন্যান্য জিনিসের ভিতরে ঢুকিয়ে পাচার করা হয়।