Monday, 3 November, 2025
3 November
Homeজ্যোতিষ/আধ্যাত্মিকতাKali Puja 2025: ব্যাপক হইচই; আমেরিকান মদ কোম্পানি তাদের বিয়ারের নাম রেখেছিল...

Kali Puja 2025: ব্যাপক হইচই; আমেরিকান মদ কোম্পানি তাদের বিয়ারের নাম রেখেছিল মা কালীর নামে!

বাংলা গানের সঙ্গে কালী নামের মদকে জুড়ে দেওয়া হলেও একটি আমেরিকান মদ কোম্পানি তাদের বিয়ারের নাম রেখেছিল কালীর নামে। আর তা নিয়ে এদেশে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

কপালে কালী মার্কা লেবেল সেঁটে বাধায় গন্ডগোল, বল হরি বোল…। অমিতাভ বচ্চন, রাখি, আমজাদ খান অভিনীত দ্বিভাষিক ছবি অনুসন্ধানে কিশোর কুমারের কণ্ঠে এই গানটি এখনও জনপ্রিয়। এখানে কালী মার্কা লেবেল বলতে দেশী বেআইনি মদের কথা বোঝানো হয়েছিল। কালী নামের সঙ্গে কেন, কীভাবে মদ বা কারণবারি জুড়ে গেল, তা নিয়ে বহু কথা, কাহিনি জুড়ে রয়েছে। বাংলা গানের সঙ্গে কালী নামের মদকে জুড়ে দেওয়া হলেও একটি আমেরিকান মদ কোম্পানি তাদের বিয়ারের নাম রেখেছিল কালীর নামে। আর তা নিয়ে এদেশে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়।

চাপে পড়ে ওরেগনের পোর্টল্যান্ডের বার্নসাইড ব্রিউইং কোম্পানি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল এবং বলেছিল যে, তারা কালী-মা বিয়ারের লঞ্চ স্থগিত করছে। কোম্পানিটি পণ্যটির নাম পরিবর্তন করে দেয়। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংসদে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিল এবং এমনকী সরকারকে এই বিষয়ে আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে তলব করার দাবি জানিয়েছিল

বিদেশী কোম্পানিগুলি তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য হিন্দু দেবতাদের ব্যবহার করার ঘটনা এটিই প্রথম নয়, যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ হয়েছে। ২০০৭ সালে, ওড়িশার হিন্দুরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পোশাক এবং আনুষঙ্গিক পোর্টাল Cafepress.com-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। যেখানে হিন্দু দেবতাদের ছবি সংবলিত অন্তর্বাসের একটি সিরিজ ছিল। ২০০৮ সালে, সুপারমডেল হাইডি ক্লুম নিউ ইয়র্কের একটি ক্লাবে হ্যালোইন পার্টিতে কালীর পোশাক পরে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন।

আরও পড়ুনঃ দুর্গোৎসব, বিজয়ার আমেজ কাটতে না কাটতেই বঙ্গে শুরু শক্তি আরাধনা; শ্যামা আরাধনায় মেতেছে কালীক্ষেত্র কলকাতা

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে, কালী কেবলমাত্র বাংলাতেই নয়, গোটা দেশে এমনকী বিদেশেও কীভাবে জনপ্রিয়। এর কারণ হচ্ছে, কালীর সঙ্গে পঞ্চ ম-এর সাধন। অর্থাৎ মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন সহকারে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা। কিন্তু, কালী কি সত্যিই মদ্যপান করেন? শাস্ত্র কিন্তু কখনই কালীপুজোয় সরাসরি মদ খাওয়ার কথা বলা নেই। এমনকী, মা কালী মদ খান এমন উল্লেখও কম। তাহলে কালীপুজোর নৈবেদ্য হিসেবে মদ বা কারণসুধা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠল কীভাবে?

শক্তিদেবীর মধ্যে একমাত্র মদ খাওয়ার কথা জানা যায় দুর্গার ক্ষেত্রে। শ্রীশ্রীচণ্ডী বলছে সে কথা। যুদ্ধে মহিষাসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করলে দুর্গা বলেছিলেন, “গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম/ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।“ অর্থাৎ, “রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন!” মধু কিন্তু এখানে মোটেও নিরীহ পানীয় নয়। সংস্কৃতে মদের একটি প্রতিশব্দ মধু।

তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তিটি হল: শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা শ্মশানে বাস করেন। তাঁর চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে নরমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।
বঙ্গে যে আটটি রূপে কালীকে উপাসনা করা হয়, তার মধ্যে একমাত্র শ্মশানকালীকেই দেখা গেল মদপানে। কিন্তু, এখানেও খটকা তৈরি হয়। কেন না, দেবীর নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা বিশেষণটিই বলে দিচ্ছে, ইনি গৃহস্থের উপাস্যা নন! এঁর পূজা কট্টরভাবেই শ্মশানে প্রশস্ত।

আরও পড়ুনঃ ছোট্ট মেয়ের স্বপ্নাদেশে শুরু, চাঁদুনি মায়ের ইতিহাস শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে

রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের মতে, চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে মধ্যভারতের বিন্ধ্য অঞ্চলের অরণ্যচারী উপজাতি সমাজে পূজিত দেবী। এই সকল উপজাতিগুলির মধ্যে চামুণ্ডার উদ্দেশে পশু ও নরবলি প্রদান এবং মদ উৎসর্গের প্রথা বিদ্যমান ছিল। হিন্দু দেবমণ্ডলীতে স্থানলাভের পরেও চামুণ্ডার তান্ত্রিক উপাসনায় এই সকল প্রথা থেকেই যায়। মদ-সহকারে যে তন্ত্রসিদ্ধ পূজাপদ্ধতি বঙ্গের বুকে প্রচলিত, তা প্রবর্তন করেছিলেন ঋষি বশিষ্ঠ।

শোনা যায়, বশিষ্ঠ মুনিই প্রথম বাংলায় মদ সহযোগে তন্ত্রসিদ্ধ কালীপুজো শুরু করেছিলেন। দীর্ঘকাল পুজো করেও তিনি সিদ্ধি অর্জন করতে পারেননি। তখন ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশে তিব্বত মতভেদে চিনে রওনা দেন বশিষ্ঠ। সেখানে গিয়ে মা তারার সাধনাপদ্ধতি। দেবী তারা বা তারিণীকে এখানে পঞ্চ ‘ম’ সহযোগে পুজো করা হয়ে থাকে। এই পঞ্চ ম হল — মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন। তন্ত্রসাধনায় মদের ব্যবহার দেখে অভিভূত হয়েছিলেন মহামুনি বশিষ্ঠ। এর পর সেই রীতিকেই নিয়ে আসেন বঙ্গদেশে। মনে করা হয় তখন থেকেই দেবীর পুজোয় মদের প্রচলন।

মদ্য বলতে মদকেই বোঝানো হয়, এমনটা মনে করেন না অনেকেই। তন্ত্রবিশারদ বা তন্ত্র নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের অনেকের মতে, মদ্য বলতে বোঝানো হয় ব্রহ্মরন্ধ থেকে গড়িয়ে আসা অমৃতধারাকে। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাধকের কুলকুণ্ডলিনী জেগে উঠলে মস্তিষ্কের উপরিভাগ অর্থাৎ ব্রহ্মতালুর কাছে থাকা ব্রহ্মরন্ধ্র খুলে যায়। সেখান থেকে যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা-ই মদ বা কারণসুধা। আর সে কারণেই অক্লেশে সাধককবি গেয়ে উঠতে পারেন এই বলে যে, ‘সুরা খাই মা সুধা ভেবে।‘

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন