বাংলাদেশ আবারও একটি পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে যে নতুন করে অস্থিরতা চলছে, তা হয়তো সমাপ্ত হতে চলেছে। এমনকি বিগত সাতমাস ধরে বাংলাদেশে যে অবৈধ সরকার চলছে, তারও অবসান হতে পারে। সোমবার সকাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে চলছে জরুরী বৈঠক। একাধিক সূত্রে জানাচ্ছে, রবিবার থেকেই রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বড় বড় শহরে সেনাবাহিনীর তৎপরতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তি সামনে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পুলিশবাহিনী-সহ সে দেশের সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে মনে করা হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে বাংলাদেশে জারি হতে পারে সেনাশাসন, অথবা জারি হতে পারে এমার্জেন্সি।
আরও পড়ুন: রিফাইন্ড আওয়ামি লীগ! রাতারাতি ঘুম উড়ে গিয়েছে হাসনাত-নাহিদদের
সূত্রের দাবি, রবিবার মধ্যরাতে অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান একটি বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বাংলাদেশের পাঁচজন লেফটান্যান্ট জেনারেল, আটজন মেজর জেনারেল এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ব্রিগেডগুলির ব্রিগেডিয়ারদের আপাতকালীনভাবে তলব করা হয়। রবিবার মধ্যরাত থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা চলে সেই বৈঠক। আরও জানা যাচ্ছে, ওই বৈঠকের পর জেনারেল ওয়াকার উজ জামান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গেও দেখা করেন এবং দুজনে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। ভোর রাত থেকে ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্টে জোরদার সেনা তৎপরতা দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ, ভোররাতে ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনীর রুটমার্চও দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সোমবার সকাল ১০টা থেকেও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর একের পর এক বৈঠক। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই বৈঠকে সকল সেনাকর্তাদের সেনা পোশাকে থাকতে বলা হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কোনও বড় প্রস্তুতিতে আছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
অপরদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে কলকাতায় অবস্থান করছেন। তাঁকে অতি গোপনে দিল্লি থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে। এখানে তিনি সরাসরি বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে, যারা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, অসম বা ত্রিপুরায় চলে এসেছিলেন। জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার রূপরেখা হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে অবস্থান করা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এদিন শেখ হাসিনা একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণ করার নির্দেশ ইউনূস নিজেই দিয়েছেন। তিনি এও বলেন, এবার সুদিন আসবে।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর হাতে আঁচড়! শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম সংগঠক হাসনাত আবদু্ল্লাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন সেটাকে খণ্ডন করেছে সেনাবাহিনী। গত রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষে বাংলাদেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ফেসবুকে ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লার বিবৃতিটি ‘হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’। এখানেই শেষ নয়, হাসনাতের সঙ্গী জাতীয় নাগরিক পার্টির আরেক সংগঠক সারজিস আলম রবিবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, “তিনিও হাসনাতের সঙ্গী হিসাবে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। জেনারেল ওয়াকার কোনও কিছু মেনে নেওয়ার জন্য আদৌ তাঁদের চাপ দেননি”। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, সার্জিসের এই মন্তব্যে আসলে সেনাবাহিনীকে শান্তির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি বলেই সূত্রের খবর। সবচেয়ে বড় বিষয় হস, সোমবার সেনা সদরে যে ধরণের বৈঠক হচ্ছে এমন বৈঠক গত বছর ৩ অগাস্ট হয়েছিল। সেদিন বাহিনীর পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে সেনা বাহিনী দেশবাসীর পাশে থাকবে। সাড়ে সাত মাস পর ঠিক সে ধরণের ঢাকার সেনা সদরে ওই বৈঠক হচ্ছে। এখন দেখার সোমবারের বৈঠক নিয়ে সেনাপ্রধান বা সেনা সদর কী বলে।