সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
রাজবাড়ির শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে কোচবিহারের অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজো বড়দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছে রবিবার থেকে। বড়দেবী কোচবিহারের কুলোদেবী। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই পুজো আজও একই আচার মেনে চলে।
শ্রাবণ মাসের শুক্লা অষ্টমী। এই দিনেই পুজোর সূচনা হয় ‘যুপপুজো’র মাধ্যমে। প্রথমে ডাঙ্গরায় মন্দিরে পূজিত হয় ময়না কাঠ। তারপর সেই কাঠ পালকি করে আনা হয় কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে চলে কাঠামো পুজো। এরপর রাধা অষ্টমীর দিনে সেই কাঠ পৌঁছয় দেবীবাড়িতে। দেবীকে স্নান করিয়ে তিনদিন ধরে রাখা হয় ‘হাওয়া খাওয়ানোর’ জন্য। তারপর নাটাবাড়ির চামটার মাটি দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। রাজ আমল থেকে একই চিত্রকর পরিবার এই প্রতিমা গড়ার দায়িত্ব পালন করে আসছে।
কোচবিহারের বড়দেবীর প্রতিমা বাংলার অন্য দুর্গাপুজোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দেবীকে রক্তবর্ণা ও ভয়ঙ্কর রূপে চিত্রিত করা হয়। প্রতিমার পাশে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীর বদলে থাকে দেবীর দুই সহচরী—জয়া ও বিজয়া। মহিষাসুরের ডান হাতে সিংহ, বাঁ হাতে বাঘ। এই ভিন্নতা বড়দেবীর পুজোকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ সাড়ম্বরে পূজিত হাতি এই বাংলায়! ভিড় পর্যটকদের
লোককথা বলছে, প্রায় ১৫১০ সালে মহারাজা বিশ্বসিংহ—যিনি তখন ‘বিশু’ নামে পরিচিত—খেলার ছলে শুকনো ময়না কাঠ ও বাঁশ পুঁতে কল্পিত দেবীর পুজো শুরু করেছিলেন। সেখান থেকেই ময়না কাঠ দিয়ে পুজোর রীতি। দশমীতে বিশেষ পুজোর পর দেবীকে কোচবিহারের লম্বা দিঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয়। শহরের বহু পরিবার আজও বড়দেবীকে নিজেদের কুলদেবী হিসেবে মানেন।



