ওনাম উৎসবের আবহে আবারও রেকর্ড ছুঁল কেরলের মদের বাজার। রাজ্য বেভারেজেস কর্পোরেশন (বেভকো)-এর হিসেব অনুযায়ী, উথরাডম (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দশ দিনে মদ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮২৬.৩৮ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় এই বৃদ্ধি ৪৯.৫৬ কোটি টাকা (৬.৩৮%)।
শুধু উথরাডমের দিনই বিক্রি ছুঁয়েছে ১৩৭.৬৪ কোটি টাকা— যা ২০২৪ সালের ১২৬.০১ কোটির তুলনায় প্রায় ৯.২৩ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুনঃ হাতে ভুয়ো আধার কার্ড, শিলিগুড়িতে পাকড়াও ইন্দোনেশিয়ান মহিলা
বেভকো ম্যানেজিং ডিরেক্টর হর্ষিতা আত্তলুরির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রাজ্যের ছ’টি আউটলেটে একদিনেই এক কোটির বেশি মদ বিক্রি হয়েছে।
- করুণাগপল্লি: ১.৪৬ কোটি টাকা
- কাবানাদ: ১.২৪ কোটি টাকা
- এদাপ্পাল: ১.১১ কোটি টাকা
- চলাক্কুডি: ১.০৭ কোটি টাকা
- ইরিঞ্জালাক্কুডা: ১.০৩ কোটি টাকা
- কুন্দারা: ১ কোটি টাকা
এ ছাড়াও, ত্রিশূরে চালু হওয়া বেভকোর প্রথম সুপার প্রিমিয়াম আউটলেটও নজরকাড়া বিক্রি করেছে, প্রায় ৬৭ লক্ষ টাকা।
উৎসবের চাঙ্গাভাব পুরো আর্থিক বছরকেও প্রভাবিত করেছে। চলতি অর্থবর্ষে ১ এপ্রিল থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৮,৯৬২.৯৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ৮,২৬৭.৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে বৃদ্ধি ৬৯৮.২৩ কোটি টাকা (৮.৪৫%)।
কেরলে ওনম মানেই মদের দোকানে ভিড়। তবে এবারের বিক্রির পরিসংখ্যান আগের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে বেভকো।
ওনাম উৎসবের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ অবশ্য নৌবাইচের খেলা এবং হাতির শোভাযাত্রা। প্রাণী সুরক্ষা আইনের কারণে অবশ্য হাতির শোভাযাত্রা এখন অনেক কমে এসেছে। তবে তাতে উৎসবের মেজাজে খামতি পড়েনি কোথাও।
আরও পড়ুনঃ আমেরিকার মাথায় হাত, দেশে নিষিদ্ধ ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ একাধিক প্ল্যাটফর্ম! বড় সিদ্ধান্ত সরকারের
ওনাম উৎসবের সময় থেকেই শুরু হয় মালয়ালম ক্যালেন্ডারের নববর্ষ। বাংলাতেও এক সময় নবান্নের মাস অগ্রহায়ণ থেকেই শুরু হত বছর। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে ওনাম উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক কাহিনিও। আর সেই কাহিনি আমাদের মোটামুটি জানা।
অসুরদের মধ্যে ছিলেন এক মহা শক্তিশালী রাজা। তাঁর নাম মহাবলি। তাঁর রাজত্ব ছিল অসুরকূলের সোনার যুগ। তাঁর প্রতিপত্তি দেখে ভয় পেয়েছিলেন স্বর্গের দেবতারাও। বিশেষ করে মহারাজা বলি যেহেতু কোনোধরণের বৈষম্যই মানতেন না, তাই দেবতাদের সম্মান জানানোর কথাও তিনি ভাবতেন না। আর তাই মহাবলিকে শায়েস্তা করার জন্য দেবতারা বিষ্ণুর স্মরণাপন্ন হলেন। বিষ্ণু সব শুনে এক পরিকল্পনা নিলেন। প্রবল পরাক্রমী বলির সঙ্গে যুদ্ধে তিনি পারবেন না। তাই এক ছলনার আশ্রয় নিলেন। বলি যখন ভোরের স্নান সেরে নদী থেকে উঠে আসছেন তখন তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল এক বামন ব্রাহ্মণ। বামনকে দেখে ভারি মায়া হল বলির। তিনি প্রার্থনা নিবেদন করতে বললেন। বামন জানালেন, তাঁর থাকার কোনো জায়গা নেই। তিনি একটু জমি চান। বলি করুণায় বিগলিত হয়ে বললেন, তিনি যতটা জমি চান, ততটাই দেওয়া হবে। বামন বললেন, বেশি না, তাঁর তিনটি পদক্ষেপের সমান জায়গা লাগবে।
বামনের নিবেদনে প্রতিশ্রুত হলেন মহাবলি। আর ঠিক তখনই বিষ্ণুর অবতার তাঁর নিজের চেহারায় ফিরে এলেন। একটি পা রাখল স্থলভাগে, অন্যটি জলভাগে। তৃতীয় পা যখন তিনি তুলে ধরেছেন তখন সমগ্র জগতকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে মাথা পেতে দিলেন মহাবলি। আর বামন অবতার তাঁর পায়ের চাপে বলিকে পাঠিয়ে দিলেন পাতালে।
ওনাম উৎসব এই কাহিনিকে স্মরণ করে। না, বামন দেবতার সাফল্যকে নয়। কারণ মালয়ালি সম্প্রদায়ের মানুষরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা মহাবলির উত্তরপুরুষ। তাঁদের মহান রাজাকে পাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বামন অবতার। কিন্তু বছরে ১০ দিন পাতাল লোক থেকে ফিরে আসার অনুমতি পান তিনি। আর এই ১০ দিন ধরেই চলে ওনাম উৎসব। প্রিয় রাজাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই।