কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা ঘাসফুলের জার্সি চাপানোর পর ভোটবাক্সে তার কতটা ডিভিডেন্ড মিলবে। আবার বারলা আসায় তৃণমূলের চা শ্রমিক নেতাদের আসন কতটা সুরক্ষিত থাকবে, আপাতত এই চুলচেরা অঙ্ক কষছেন চা বলয়ের তৃণমূল নেতারা। অন্যদিকে বিজেপিও অঙ্ক কষতে ব্যস্ত, কোথায় কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা নিয়ে। দু’দলের শীর্ষনেতারা অবশ্য তাঁদের দলগত অবস্থান থেকেই মন্তব্য করছেন। আগামী সোমবার বানারহাটে বিজেপির তিরঙ্গা যাত্রা কর্মসূিচতে যোগ দিতে আসার কথা শোনা যাচ্ছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। বারলার ডেরায় এসে তিনি কী বলেন, সেদিকে নজর থাকছে রাজনৈতিক মহলের।
রাজনীতিতে বারলার উত্থান আদিবাসী আন্দোলন ও চা শ্রমিক নেতা হিসেবে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এখনও চা বাগানে দলের ট্রেড ইউনিয়নে তাঁর কী ভূমিকা হবে, সেটা পরিষ্কার নয়। যদিও শুক্রবার রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জানিয়েছিলেন, দলের সংগঠনের পাশাপাশি চা শ্রমিক সংগঠন দেখার দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হবে। শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কমিটিগুলির চেয়ারপার্সন ও সভাপতিদের নাম নতুন করে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য কমিটিতে সহ সভাপতি ও সম্পাদক পদে নেওয়া হয়েছে ১৪ জনকে। রাজ্য কমিটির তালিকায় বারলার নাম নেই।
যদিও দলের আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির পুনর্মনোনীত সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব যখন বলেছে তখন নিশ্চয় তারা পদক্ষেপ করবে। ট্রেড ইউনিয়নে কীভাবে বারলাকে কাজে লাগানো হবে, সেটাও দ্রুত ঠিক করে ফেলা হবে।’ আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দল যেমনটা বলবে তেমনটাই হবে।’
আরও পড়ুন: জোর প্রস্তুতি চলেছে; মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে
এদিকে, বারলা গেলেও তাঁর অনুগামীদের সবাই তৃণমূলে যাবেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যেমন বারলা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কালচিনির নেতা তৌফিল সোরেন বলেন, ‘এটা ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সুসম্পর্ক ছিল, আছে ও থাকবে। তবে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’ আরেক বারলা অনুগামী নেতা ও বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ হাতি বলছেন, ‘আমরা বিজেপিতেই আছি। পর্দার অন্তরালে কেউ জন বারলার সঙ্গে আছে কি না জানা নেই। তিনি তৃণমূলে যাওয়ায় কিছু জায়গায় ক্ষতি হতে পারে। তবে সেটা পূরণ করে নেওয়ার ক্ষমতাও দলের রয়েছে।’ বিজেপির আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা মনে করছেন, কোথাও কোনও ক্ষতি হবে না। বিজেপি ব্যক্তিনির্ভর দল নয়।
আরও পড়ুন: রূপচর্চার সিক্রেট ফাঁস! নিজেই নিতেন লম্বা দাড়ির যত্ন বিশ্ব কবির
এদিকে, বারলা সংগঠনে ঢোকার পর তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে কোনও বদল ঘটবে কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে সংগঠনের নেতাদের মধ্যেই। যদিও এব্যাপারে প্রকাশ্যে অন্তত কেউ কিছু বলছেন না। বরং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিন রাইয়ের কথায়, ‘কোথাও কোনও সমস্যা হবে না। ওঁকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হবে।’ জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা দুলাল দেবনাথের দাবি, ‘বারলা আসার পর ডুয়ার্স, তরাই ও পাহাড়ে বিজেপির ভাঙন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
তৃণমূল সূত্রে খবর, হাইকমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক শনিবার বারলা কলকাতা থেকে ফিরলেই তাঁকে বাগ্রাকোট থেকে সংবর্ধনা প্রদান কর্মসূচি শুরু হবে। ওদলাবাড়ি, চালসা, নাগরাকাটা ও লক্ষ্মীপাড়া চা বাগান থেকে বারলার বাড়ি পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। কনভয় সাজিয়ে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘যে রুট দিয়ে বারলা বাড়িতে ফিরবেন ডুয়ার্সের ওই সব এলাকায় তাঁকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতির কাজ সেরে ফেলা হয়েছে।’