কুশল দশগুপর; শিলিগুড়ি:
শিলিগুড়িতে নদীকে দূষণমুক্ত করতে প্রচেষ্টার অন্ত নেই। নদী পরিষ্কার করা, সেতুতে লোহার জালি দিয়ে রেলিং দেওয়া হয়েছে। নদী দূষণ রোধে প্রচারও কম হচ্ছে না। কিন্তু এরই মধ্যে নদী দখলের প্রয়াসও থামছে না। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলেশ্বরী, জোড়াপানি নদীর অনেকটা অংশ দখল করে নির্মাণ চলছে। এমনই চিত্র নতুন করে ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও ধরা পড়েছে। নেতাজি বয়েজ হাইস্কুল সংলগ্ন ফুলেশ্বরী নদীর সেতুর কাছেই একটি বাড়ির ছাদের অনেকটা অংশ নদীর ওপরে গিয়ে পড়েছে। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেই বলেছেন, একজনের দেখাদেখি অনেকেই এভাবে নদীর ওপরে বাড়ির অংশ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। পুরনিগম যখন নদী উৎসব করার কর্মসূচি নিচ্ছে এবং এই উৎসবে সচেতনতার বার্তা দিতে চাইছে তখন নদী দখলে কোনও পদক্ষেপ না করায় প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠছে, সরকারি টাকা খরচ করে নদী সংস্কার হলেও দখলদারি আটকাতে ব্যর্থ পুরনিগম।
আরও পড়ুন: উধাও লেখা ‘জগন্নাথ ধাম’! কৌতূহল দিঘায়
পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘নদীকে বাঁচাতে পুরনিগমের তরফে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই নদী ফের দখলের চেষ্টা কোনওভাবেই মেনে নেব না। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এবং মানুষের দখলদারির জেরে শিলিগুড়ির ফুলেশ্বরী, জোড়াপানি নদী কার্যত নালার আকার নিয়েছিল। সাধারণ মানুষের বাড়ির আবর্জনা ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছিল এই নদীগুলি। ফলে কালো নোংরা জল এবং আগাছা গোটা নদীকে গ্রাস করেছিল। এই নদীগুলি থেকে শহরে দূষণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে নদীকে রক্ষা করতে বর্তমান পুরবোর্ড উদ্যোগ নিয়েছে। নদীতে আর্থমুভার নামিয়ে আগাছা এবং সমস্ত আবর্জনা তুলে ফেলা হচ্ছে। নদীতে যাতে কেউ আবর্জনা ফেলতে না পারে সেজন্য প্রতিটি সেতুতেই লোহার জালি দিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নদী দখলের প্রবণতা কিছুতেই কমছে না।
কিছুদিন আগে ২০ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানায় ফুলেশ্বরী নদীর একাংশ দখল করে এক ব্যক্তির নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ওই নির্মাণের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি পুরনিগম। এরই মধ্যে এই ওয়ার্ডেরই নেতাজি বয়েজ হাইস্কুলের পিছনের রাস্তায় থাকা ফুলেশ্বরী সেতু সংলগ্ন এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ছাদ কার্যত নদীর ওপরে নিয়ে আসা হয়েছে। যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই ক্ষুব্ধ।
আরও পড়ুন: মমতা দেখা করার আগেই ‘কিডন্যাপিং’ করা হল! বড় অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার অনেকেরই বক্তব্য, রাস্তা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে বাড়িটির ছাদ নদীর ওপরে চলে গিয়েছে। তার পরেও সবাই চুপচাপ রয়েছে। এভাবে একজনের দেখে সবাই নদীর ওপরে নির্মাণকাজ শুরু করবে। অবিলম্বে পুরনিগমের পদক্ষেপ করা উচিত বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। শিলিগুড়ির পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেছেন, ‘একদিকে পুরনিগম নদীগুলি বাঁচানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু কিছু মানুষ নিয়মিত নদী দখলের কাজও করছেন। ফুলেশ্বরী, জোড়াপানি নদীর অনেক জায়গাই প্রতিদিন দখল হচ্ছে, পাশাপাশি প্লাস্টিক, থার্মোকল, বাড়ির আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। মানুষের এই বদভ্যাস, অন্যায় আচরণ দূর করতে পুরনিগমকে আরও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অভয়া বসু বলেছেন, ‘ওই বাড়িটি এখন নদীর ওপরে তৈরি হচ্ছে এমনটা নয়। আগে থেকেই বাড়িটি ওভাবে রয়েছে। আগের পুরবোর্ড সবকিছু দেখেও কোনও পদক্ষেপ করেনি। ফলে এখন আমাদের এর ফল ভুগতে হচ্ছে। ওই বাড়িটিতে এখন ছাদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা পিছনের কিছুটা অংশ ভাঙিয়েছি। বাকিটাও খতিয়ে দেখব।’