কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
অশান্ত প্রতিবেশী দেশ নেপালে চলতে থাকা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে উদ্বেগে ভিনদেশে আটকে থাকা বহু ভারতীয়, বিশেষ করে বাংলার বাসিন্দারা। সেই পরিস্থিতিতে বুধবার জলপাইগুড়ির সরকারি সভা থেকে সরাসরি আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিশ্রুতি, দু’-এক দিনের মধ্যেই আটকে থাকা সবাইকে ফিরিয়ে আনা হবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে।
মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, “তাড়াহুড়ো করবেন না। নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন না। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”
আরও পড়ুনঃ ‘সরকার পতনের এশিয়া কাপ’! নেপালের গৃহযুদ্ধের আড়ালে কে?
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতভর উত্তরকন্যায় বসেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি নিজে। বলেন, “আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। আমরা দেখে নিতে পারি।” সেই সঙ্গে কোভিডের সময় নিজের ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দেন, যখন “এক দিনও ছুটি নিইনি, সারা রাজ্য পাহারা দিয়েছি।”
উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিনেই পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর নির্দেশেই ইন্দো-নেপাল সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। রাজ্য পুলিশের আধিকারিকেরা এসএসবি’র সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন।
এসএসবির ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট যোগেশকুমার সিংয়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশকুমার যাদব ও দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীন প্রকাশ সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করেন। এরপরই সীমান্ত সংলগ্ন থানাগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। পানিট্যাঙ্কি-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে নাকা চেকিং।
আরও পড়ুনঃ দিনহাটা আদালতে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ; কড়া নিরাপত্তার চাদরে আদালত চত্বর
দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার জানান, নেপাল পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কোনও ভারতীয় সমস্যায় পড়লে দার্জিলিং জেলা পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি, অনেকেই নেপালে বেড়াতে গিয়েছেন। বলব, দু’-একটা দিন ধৈর্য ধরুন। আস্তে আস্তে আপনাদের ফিরিয়ে আনব।”
তিনি যোগ করেন, “ওরা (নেপাল) শান্তি ফেরাক, আমরাও প্রতিবেশী দেশ হিসেবে খুশি হব। কিন্তু এখনই হুড়োহুড়ি করে বিপদের মুখে না পড়াই ভাল।”
এদিনের বক্তৃতায় একাধিক বার কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “প্রচারের মাস্টার তো! সব টাকা তো প্রচারেই উড়িয়ে দেয়!”
নাম না করে মোদীর উদ্দেশে এও বলেন, “সব আমার নামে হবে! এটা আমি নয়, ‘আমরা’ বলতে শিখতে হবে।” তাঁর মতে, কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য অর্থও আটকে রাখে, অথচ বদনাম দেওয়ার কাজটা ভালভাবেই করে।
বিরোধীদের উদ্দেশেও সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “কথায় কথায় কোর্টে চলে যাচ্ছে। চাকরি আটকে দিচ্ছে, আর রাজ্যের বদনাম করছে।” কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, “কোর্টে যাচ্ছো কেন? ভোটে যাও! পিল খাবে আর মামলা করবে—এই হচ্ছে তোমাদের রাজনীতি?”
শেষে তাঁর সংযোজন, “আমি এই জায়গাটাই আছি বলে এত বদনাম নিতে হয়!”