দেবজিৎ মুখার্জি, কোলকাতাঃ
অন্ধকার রাত্রি, ভাই-বোনেদের সঙ্গে বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, তার উপর ভূতের গল্প….. এক আলাদাই ব্যাপার। বলা ভালো, পুরো পরিবেশটাই পাল্টে দেয় এই জাতীয় গল্প। বয়স ৮ হোক কি ৮০, এখনো সকলে শুনতে ভালোবাসে ভূতের গল্প। ভুতুড়ে বাড়ি থেকে শুরু করে শ্মশান বা কবরস্থান, এমন অনেক জায়গা আছে যার নাম শুনলেই গা ছমছম করে। যাওয়া তো দূরের কথা। তবে যখন কথা ওঠে গল্প শোনার, তখন আগ্রহ যেন তুঙ্গে পৌঁছে যায় সকলের।
আজ আমার নিজের সঙ্গে হওয়া একটি ঘটনার কথা ‘বঙ্গবার্তা’র সকল পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করব। জানিনা সেই অনুভূতি সত্যি নাকি মনের ভুল….. তবে কিছুক্ষণের জন্য রীতিমতো গায়ে কাঁটা এসে গিয়েছিল। কথায় আছে কারো মৃত্যু হলে, তাঁর আত্মা শ্রাদ্ধ বা নিয়মভঙ্গ পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে থেকে যায়। কেউ দেখতে পায় আবার কারো চোখের সামনে ঘটলেও কিছু বুঝতে পারে না। তবে আমার সঙ্গে এমন এক ঘটনা ঘটেছিল, সত্যি বলতে কিছুক্ষণের জন্য আমাকে ভালোই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তবে প্যানিক করিনি।
আরও পড়ুনঃ খনখনে গলায় ভেসে এল ‘বাঁচতে চাইলে পালাও…’; কেন বললেন অতীন ঘোষ
যাই হোক গল্পে আসা যাক। ঘটনাটি ২০১৫ কি ২০১৬ সালের। অতিরিক্ত বয়সের কারণে না ফেরার দেশে চলে যান আমার বড় পিসি। মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও আপনজনকে বেশ কষ্ট দিয়েছিল। আমার বাবা থেকে শুরু করে আমার পিস্তত দাদা ও বাকি পিসিরা, সকলেরই চোখে দেখা গিয়েছিল জল। যত যাই হোক রক্তের সম্পর্ক বলে কথা। তখন আমার বয়স ২৫ কি ২৬। কল সেন্টারে চাকরি করতাম। আমার পিসির বাড়ি থেকে আমার কর্মক্ষেত্র খুব একটা বেশি দূরে ছিল না। বরং ভালই কাছেই ছিল। সুতরাং কদিন পিসির বাড়ি থেকেই অফিস করেছিলাম।
আমার শিফ্ট ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে সেদিন আমি অফিস শেষে কলিগদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে পিসির বাড়ি ঢুকি। বাইরে সেদিন খাওয়া পড়েছিল বলে, আর রাতে খেতে ইচ্ছা করেনি। পিসি উপরের ঘরে শুতেন। আমি সেই ঘরেই শুতে যাই। যখন উনি জীবিত ছিলেন, ওনার বাড়িতে গিয়ে আমি ঘুমালেই আমার মাথায় উনি হাত বোলাতেন। ওনার মৃত্যুর পর যখন ওনার বাড়িতে গিয়ে আমি ক’দিন ছিলাম, আমার খালি সেই কথাগুলি মনে পড়ত।
রাত তখন ১২টা বা তার একটু বেশি। ঘুম আসছিল না বলে ফোনে রেডিও শুনছিলাম। বলতে গেলে, গান শুনছিলাম। রাতের অন্ধকার আর ৯০ দশকের কুমার শানু, উদিত নারায়ন, অভিজিতদের গান…… একেবারে স্বর্গীয় সুখ। হঠাৎ ১টা নাগাদ আমার চোখ লাগে। ফোনটা চার্জে রেখে আমি পিসির খাটেই শুয়ে পড়ি। চোখ সবে বুজেছিলাম। হঠাৎ কেন জানি না মনে হল কেউ কপাল থেকে মাথা পর্যন্ত হাত বুলালো। কিন্তু সেই অবস্থাতেও আমার মাথায় খটকালো যে আমি তো রুমে একা। তাহলে মাথায় কে হাত বুলালো?
আরও পড়ুনঃ ভৌতিক অভিজ্ঞতা! ‘কেউ দরজা খুলছে, বিছানায় এসে বসল…’, ভূতচতুর্দশীর আগে বামনেত্রী দীপ্সিতা
তড়িঘড়ি আমি লাইট জ্বালি। প্রথম যে জিনিসটা আমার চোখে পড়ে, সেটা হল আমার মৃত বড় পিসির ছবি। সত্যি বলতে, তা দেখে আমার একটু হলেও ভয় লেগে গিয়েছিল। আমি লাইট অফ করে চার্জার ও ফোন নিয়ে নিচে নামি। দাদারা যে ঘরে শুয়েছিলেন, সেখানে যাই এবং বলি যে আমি তাদের ঘরেই শোবো। সেই মুহূর্তে আমায় বেশি প্রশ্ন না করে দাদারা আমাকে বললেন নিচে মাদুর পেতে শুয়ে পড়তে। আমিও তাই করি।
সকালবেলা আমাকে আমার বড়দা জিজ্ঞেস করেন যে হঠাৎ আমি তাঁদের ঘরে কেন শুলাম। আমিও পুরো ঘটনাটি জানাই। বড়দা আমার কথাটি বিশ্বাস করলেও ছোড়দা করেননি। উনি বললেন যে সেটা আমার মনের ভুল ছিল। মাকেও জানাই বিষয়টি। তা শুনে মা আমাকে বললেন, “হতে পারে তোর পিসি তোকে বোঝালো যে উনি তোর আশেপাশেই রয়েছেন।” শুধু তাই নয়, তখন বড়দাও আমাদের কথার মাঝে ঢোকেন। তিনিও স্বীকার করেন যে বড় পিসি যে তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন, তা তিনি ভালো করে বুঝতে পারেন। বড়দা বললেন, “আসলে মা অনেক টান নিয়ে মারা গেছেন। বাড়ির প্রতি, নিজের নাতির প্রতি।”
যদিও সেদিনের পর আমি আর কিছু বুঝতে পারিনি। সত্যি বলতে আমি পিসির ঘরে শুইওনি সেই ঘটনার পর। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি যে টান নিয়ে কোন ব্যক্তি পরলোকগমন করলে, তিনি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়ির সদস্যদের সঙ্গেই থাকেন। বলা ভালো, ঘোরাফেরা করেন। তবে দিনের শেষে একটা প্রশ্ন লেগেই থাকে যে আদৌ কি আমার সাথে যা ঘটেছিল, তা সত্যি নাকি মনের ভুল। তবে এর সঙ্গে এটাও মনে চলে যে এতটা কি কারোর ভুল হতে পারে। তবে তারাদের দেশে উনি ভালোই থাকুক। এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাওয়া সম্ভব নয়।