কাঁধে করে নয়। মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে হল ডিঙিতে। তাও আবার বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। জলযন্ত্রণার মধ্যেই আরও এক করুণ ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। মৃত গোপাল শাসমলকে ডিঙিতে চড়িয়ে ৩ কিলোমিটার দূরের শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করলেন তাঁর পুত্র ও প্রতিবেশীরা।
ঘাটাল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুকচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা গোপাল শাসমল(৮২)। অসুস্থ হয়ে বাড়িতে মৃত্যু হয় তাঁর। পরিজনরা চিন্তায় পড়েন মৃতদেহ দাহ করা নিয়ে। কারণ, বন্যায় প্লাবিত সুকচন্দ্রপুর এলাকা। তখন ডিঙিতে চড়িয়ে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় ঘাটাল পৌরসভার দু নম্বর ওয়ার্ডের আড়গোড় এলাকায়। আড়গোড় এলাকায় যে শ্মশান তৈরি করা হয়েছে, তা বন্যার জন্য অনেক উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে। তাই চতুর্দিকে জল থাকলেও শ্মশান জেগে রয়েছে। আশপাশে কারও মৃত্যু হলে এখন এই শ্মশানেই দাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সামান্য দেরি! পৃথিবীর পথে পাড়ি শুভাংশুর
মৃতের পুত্র স্বপন শাসমল বলেন, “কফ-সর্দি-কাশি হয়েছিল বাবার। আচমকা মৃত্যু হয়। আমাদের ওখানে দাহ করার কোনও জায়গা নেই। তাই তিন কিলোমিটার দূরের এই শ্মশানে নিয়ে এসেছি।” বাবার মৃতদেহ এভাবে ডিঙিতে আনার যন্ত্রণার কথা বললেন মৃতের আর এক ছেলে সৌমেন শাসমলও।
আরও পড়ুনঃ ২০ জনের তালিকা তৈরি, নবান্ন যাওয়ার ছাড়পত্র পেলেন চাকরিহারারা
প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হয় ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই সমস্যা আজকের নয়। দশকের পর দশক ধরে ঘাটালের মানুষকে জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের উদ্যোগ নেওয়া হয় কয়েক দশক আগে। কিন্তু, সেই উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে চাপানউতোর বেড়েছে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্য কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্য সরকারই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করবে। রাজ্য বাজেটে এর জন্য ৫০০ কোটি টাকা ঘোষণা করাও হয়। কিন্তু, বিজেপির অভিযোগ, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে শুধুই রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসকদল। শাসক-বিরোধী এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই মৃতদেহ ডিঙিতে চড়িয়ে শ্মশানে নিয়ে যেতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।