কুশল দাশগুপ্ত:
প্রশাসনের জেদ বনাম খনি বিরোধিতার তেজ– এই সংঘাতে উত্তাপ আরও বেড়েছে পাঁচামীতে। কাজ বন্ধ রয়েছে তিন দিনধরে। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে দু’দিন ধরে।খনি নির্মাণ করবার আসল জায়গা, চাঁন্দা মৌজার জঙ্গল বৃহস্পতিবার গমগম করেছে আদিবাসী মহিলা-পুরুষের একযোগে সোচ্চার প্রতিবাদে।
এদিন সকাল থেকেই জঙ্গলে ভিড় জমতে থাকে বাসিন্দাদের। জায়গাটি মাত্র কিলোমিটার খানেক দূরে খনন করবার থেকে। সেই খনির গর্ত থেকে ওঠা মোরামের স্তূপেই, গত মঙ্গলবার, প্রতিবাদের প্রতীক চড়কা পুঁতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকার মানুষ। বড় সংখ্যায় শামিল থাকছেন মহিলারা। সব থেকে বেশি প্রতিবাদ করছেন তারাই।
আরও পড়ুন: এবার থেকে শিলিগুড়িতে বেসরকারি হেডিংয়ে বাংলা ভাষা, জানালেন গৌতম দেব
এরপর থেকে প্রশাসনের নানা বাধা, প্রচেষ্টা, শাসানি, হুমকি বেড়েছে।
চান্দার জঙ্গলেই বৃহস্পতিবার বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন বিভিন্ন গ্রামের মোড়লরা। সকাল থেকেই সেখানেই জড়ো হতে থাকেন বাসিন্দারা। এদিন দিনভর চলে মত বিনিময়। সোচ্চারে সকলেই উগড়ে দেন খনি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ। ক্ষোভ আরও বেশি হয় প্রশাসনিক বাধায়। জেদ বেড়েছে এবং তার সাথে বেড়েছে ক্ষোভ।
সাগরবান্দির এক মহিলা জানান, ‘‘আরও মানুষ আসত। কিন্তু পুলিশ নানা জায়গায় বাধা দিয়েছে।তারাই বিভিন্নভাবে আটকানোর চেষ্টা করছে, হুমকি দিচ্ছে।’’ সারাদিন সেই জঙ্গলেই কাটিয়েছেন জড়ো হওয়া মানুষ। খাওয়া নেই যাওয়া নেই,দিনের শেষে নির্যাস থেকে গিয়েছে একই, ‘খনি চাই না।’ বাড়ছে আন্দোলন, কিন্তু সমাধান নেই।
পাঁচামীর অভ্যন্তরের আন্দোলন, প্রতিবাদের ভাষা, ক্ষোভের ছবি যাতে না ছড়ায় তার জন্য বুধবারের মত বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেট পরিষেবা। কিন্তু আন্দোলনের ছবি, বার্তা ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পারেনি প্রশাসন। এখনও মোরামের স্তূপ থেকে চড়কা তোলা সম্ভব হয়নি। রোজ রোজ আন্দোলনের আগুন, তিল তিল করে বাড়ছে। যেখানে যোগ দিয়েছেন, ৮ থেকে ৮০, সকলে।
আরও পড়ুন: টিকা দিতে গিয়ে মৃত্যু, ক্ষোভ লাটাগুরিতে
বুধবারের মত বৃহস্পতিবারও সমাজকর্মীদের পড়তে হয় পুলিশি বাধার মুখে। এদিন বোলপুর থেকে বেরিয়েছিল সমাজকর্মীদের অপর এক প্রতিনিধিদল পাঁচামীর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিতেই ফের পুলিশ রাস্তা আটকায়। পুলিশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য শিবু সরেনকে থানায় ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখে বলে অভিযোগ। তাদের উপর চলে অত্যাচার, প্রতিনিধি দলে থাকা বিশ্বনাথ কিস্কু, রাম সরেনরা জানিয়েছেন, ‘‘পাঁচামীতে আদিবাসী ভাইবোনের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়াতেই আমরা পাঁচামী যেতে কিন্তু পুলিস অন্যায়ভাবে আটকে দিয়েছে।’’ এদিনও প্রশাসনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। যদিও প্রশাসন তাদের ওপর করা অভিযোগ মানতে একেবারেই নারাজ। তাদের দাবি বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, সেই কারণেই হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। অন্যদিকে আদিবাসীদের দাবি তারা কোন অন্যায় করেননি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। তারা তাদের ন্যায্য কথাটাই বলতে চাইছেন, অথচ সেখানে প্রশাসন নির্বাক হয়ে উল্টোদিকে তাদের উপর অত্যাচার করে চলেছে। যার প্রভাব হয়তো থেকে যাবে আগামী বেশ কয়েকটি বছরেও। দৈনন্দিন কাজ তাদের বন্ধ হয়ে গেছে, অন্য সংস্থান ও প্রশ্নচিহ্নের পথে দাঁড়িয়ে গেছে, তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার সেই কারণেই এই প্রতিবাদ ।
