বাংলাদেশের ঢাকায় স্কুলভবনে বায়ুসেনার বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় আরও বাড়ল মৃতের সংখ্যা। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী) সে দেশের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, চিকিৎসক মহম্মদ সায়েদুর রহমান একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি জানান, বিমান দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসীন রয়েছেন ৭৮ জন। সব মিলিয়ে আহতের সংখ্যা অন্তত ১৭০ বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক বৈঠকে চিকিৎসক সায়েদুর দগ্ধ শিশুদের জন্য প্রার্থনা করার আর্জি জানান। একই সঙ্গে তিনি জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক রক্তদাতা রয়েছেন। তবে নেগেটিভ গ্রুপের কিছু রক্ত লাগতে পারে বলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তরফে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বৃষ রাশির জাতকের, আপনার ভাগ্যে কী আছে?
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর সোমবার দুপুরে (স্থানীয় সময়) আচমকাই ভেঙে পড়ে বায়ুসেনার একটি বিমান। ওড়ার ১২ মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। রাত গড়িয়ে যাওয়ার পরেও উদ্ধারকাজ চলে ওই স্কুলে। ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কেউ আটকে আছেন কি না, তারই খোঁজ চলে। সামরিক সরঞ্জাম-সংক্রান্ত মার্কিন ওয়েবসাইট ‘গ্লোবাল সিকিউরিটি ডট কম’-এর তথ্য অনুযায়ী, এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি চিনের একটি সংস্থা তৈরি করে। সংস্থার নাম চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। এই বিমানটি দুই আসন বিশিষ্ট এবং একক ইঞ্জিন যুক্ত। সাধারণত প্রশিক্ষণের কাজে বিমানটি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। সোমবারও মহড়ার সময় ভেঙে পড়ে সেটি।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলার বিমানঘাঁটি থেকে উড়েছিল এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি। সেই বিমানে ছিলেন এক জন পাইলট। ওড়ার ১২ মিনিটের মাথাতেই ভেঙে পড়ে বিমানটি। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানটি ওড়ার পর পরই তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি লক্ষ করেন পাইলট। তিনি চেয়েছিলেন বিমানটিকে কোনও ফাঁকা এলাকায় অবতরণ করাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পারেননি। স্কুলের একটি ভবনের উপর ভেঙে পড়ে সেটি।
মাইলস্টোন স্কুলের যে ভবনে বিমানটি ভেঙে পড়ে, সেখানে ১৬টি ক্লাসরুম আর শিক্ষকদের চারটি ঘর ছিল। প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হত এই ভবনে। বিমানটি যখন ভেঙে পড়ে, তখনও ক্লাস চলছিল। কিছু ক্ষণ পরেই ছুটির ঘণ্টা বাজত। তার আগেই দুর্ঘটনা। বিমান ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় তাতে। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে স্কুলের ওই ভবনে। অনেক পড়ুয়াই চাপা পড়ে ধ্বংস্তূপের নীচে। আগুনে দগ্ধ হয় অনেকে।
আরও পড়ুনঃ স্বাধীন ভারতে প্রথমবার, দায়িত্ব সামলেছেন সকালেও; আচমকা ইস্তফা ধনখড়ের
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র স্কুলের সামনে ভিড় শুরু হয় অভিভাবকদের। সকলের চোখেমুখেই ছিল উৎকণ্ঠার ছাপ। সকলেই দিশাহারা। ধ্বংসস্তূপের নীচে সন্তানদের খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। অনেক অভিভাবকই দাবি করেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছেন না। কেউ আবার ছোটেন হাসপাতালে। একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স আসতে শুরু করে ঘটনাস্থলে। আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই অনেকের মৃত্যু হয়। তবে অনেকের দেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে, তাঁদের চেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নিচ্ছেন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।