২০২০-২১ মরসুম থেকে আইএসএলে খেলছে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। মাঝের পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। অনেক কিছু বদলেছে। পাল্টায়নি একটাই জিনিস। কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স। শনিবার আইএসএলের দশম কলকাতা ডার্বি হতে চলেছে। আগের ন’টি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এক বারও জিততে পারেনি। শনিবারও তারা জিতবে, এমন আশা অতি বড় সমর্থকও করছেন না। তবে ডার্বি যে হেতু পঞ্চাশ-পঞ্চাশ, তাই ক্ষীণ হলেও একটা আশা রয়েছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এই ম্যাচের জন্য অপেক্ষায় থাকেন দেশের ফুটবল প্রেমীরা। শনি সন্ধ্যায় কলকাতা ডার্বি। যদিও এই বড় ম্যাচ কলকাতায় হচ্ছে না। গঙ্গাসাগর মেলার কারণে নিরাপত্তা দিতে সমস্যা রয়েছে, এমনটাই জানিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সে কারণেই শেষ মুহূর্তে বড় ম্যাচ সরানো হয় অসমের গুয়াহাটিতে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ইতিহাসে দু-দলের অসম লড়াই দেখা গিয়েছে। এ বার ‘অসম’ পারফরম্যান্সের অপেক্ষায় দু-দলের সমর্থকরাই।
আরও পড়ুন: Bengali Short Story: “নীরব পৃথিবী চায়” (Part: 3)
শক্তির দিক থেকে মোহনবাগান বেশ কিছুটা এগিয়ে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের পরিসংখ্যানও তাদের পক্ষেই। আইএসএলে এখনও অবধি ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে কলকাতার দুই ঐতিহ্যশালী ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। শুরু থেকে এই অবধি একপেশে লড়াই দেখা গিয়েছে। মোহনবাগান জিতেছে আটটি ম্যাচ। বাকি একটি ড্র হয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দশম-বার মুখোমুখি হতে চলেছে দু-দল। মোহনবাগানের টার্গেট ‘দশ’ কা দম। তেমনই ইস্টবেঙ্গলের লক্ষ্য অসম লড়াইয়ের পরিসংখ্যান কিছুটা বদলে দেওয়ার।
শনিবার অনিরুদ্ধ থাপা ছাড়া প্রায় পুরো দলই পাচ্ছে মোহনবাগান। অনিরুদ্ধের জায়গায় খেলানোর মতো ফুটবলারও রয়েছে একাধিক। বাকিরাও বাড়তি দায়িত্ব নিতে পিছপা হবেন না। সেখানে ইস্টবেঙ্গলে আনোয়ার না থাকা মানে রক্ষণ অর্ধেক হয়ে যাওয়া। আগের ম্যাচে যে ভাবে গোল খাইয়েছেন, তাতে হিজাজি মাহেরের উপর বেশি ভরসা না থাকাই ভাল। হেক্টর ইয়ুস্তে এক বছর আগে মোহনবাগানে যা খেলেছেন তা ইস্টবেঙ্গলে খেলতে পারছেন না। লাল-হলুদ রক্ষণ কোন দিন বাঁচাবে আর কোন দিন ডুবিয়ে দেবে কেউ জানে না।
আরও পড়ুন: Today’s Horoscope: আজ ১১ ই জানুয়ারি ২০২৫ শনিবার; এই আটটি রাশির কেরিয়ারে উন্নতি
ইস্টবেঙ্গল শিবিরে একাধিক চোট আঘাত। মরসুমের মাঝপথে ছিটকে গিয়েছেন মাদিহ তালাল। তাঁর পরিবর্ত নেওয়া হয়েছে সদ্য। গত ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন আনোয়ার আলি। ম্যাচের আগের দিনও প্র্যাক্টিস করতে পারেননি। তাঁকে আদৌ পাওয়া যাবে কি না, যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। না-এর সম্ভাবনাই বেশি। একঝাঁক তরুণকে নিয়েই দল সাজাতে হবে। মোহনবাগানে সেই অর্থে কোনও সমস্যা নেই। শুধু অনিরুদ্ধ থাপাকে পাওয়া যাবে না। বাকি সকলেই ফিট।
দুই দলের কোচ কী বললেন
মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা
- ছেলেরা লড়াইয়ের জন্য তৈরি। আশা করি জিতব। তবে সহজে জিততে পারব না। আমরা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রয়েছি। ওরা ১১ নম্বরে রয়েছে। হয়তো পয়েন্টের বড় ব্যবধান রয়েছে। কিন্তু সেটা পুরোটাই আইএসএলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের বিচারে। আমার মতে, আইএসএলে এত দিন যা কিছু করেছি তার কোনও মূল্য নেই। কাল কী করব তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি আমরা নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি তা হলে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
- আমরা বাকি দলগুলির সঙ্গে যে মানসিকতা নিয়ে খেলি সে ভাবেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলব। আমরা জানি ইস্টবেঙ্গল কেমন খেলে। কী ভাবে আক্রমণ বা রক্ষণ করে। সেই মতো আমাদেরও পরিকল্পনা তৈরি আছে। ২০ মিনিট নয়, আমার ছেলেরা যাতে ৯০ মিনিটই ১০০ শতাংশ দিতে পারে সেটা চাই। সেটাই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও করার চেষ্টা করব।
- ম্যাচটা তো ৯০ মিনিটের। আমি জানি আমার দল কী ভাবে খেলতে পারে। আমরা যদি ১০০ শতাংশ দিতে পারি তা হলে বিপক্ষ দল কী করল সেটা নিয়ে ভাবতেই হবে না। আমি শুধু নিজের দলের খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে চাই। বাকিরা কী করতে পারে সেটা নিয়ে ভাবিত নই।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজ়ো
- এই ধরনের ম্যাচে ‘আন্ডারডগ’ বলে কিছু হয় নাকি? মনে হয় না। আসলে আপনারা বোধহয় আমাকে দিয়ে কিছু কড়া কথা বলাতে চান। তাই এ কথা জিজ্ঞেস করছেন। আমি বলব, এই ম্যাচে দুই দলেরই জেতার সুযোগ ৫০ শতাংশ করে। দুই দলেরই সমস্যা আছে। মোহনবাগানও কয়েকটা ম্যাচে অনেক কষ্ট করে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে জিতেছে। তাই এই ম্যাচে কেউই এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে বলে মনে হয় না।
- আমার কোচিং জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এসেছে। শনিবারের ম্যাচটা তার মধ্যে অবশ্যই অন্যতম। তবে কঠিনতম নয়। এটা ঠিকই যে, মোহনবাগান অনেক ভাল ফর্মে থাকা দল। হয়তো এই ম্যাচে তাদের সফল হওয়ার সুযোগই বেশি। তবে ওদের থামানোর জন্য যা যা করা দরকার, সবই করব আমরা।
- প্রথম ডার্বিতে দলের অবস্থা যে রকম ছিল, তাতে আমাদের জেতার সম্ভাবনাও কম ছিল। এখন অবস্থা অনেক ভাল। ডিসেম্বর মাসটা আমাদের ভাল কেটেছে। দলের ছেলেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। তবে চোট-আঘাতের জন্য কয়েক জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের অভাব বোধ করছি। আমরা পয়েন্ট টেবলের নীচের দিকে থাকায় মোহনবাগান হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে। কিন্তু গত চার-পাঁচটা ম্যাচের ফল যদি দেখেন তা হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে, সেরা ছয়ে পৌঁছতে কতটা মরিয়া আমরা।