দিল্লিতে হয়েছে বৈঠক, বাংলা এসেছেন কর্তারা, এখন আবার শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং এবং ম্যাচিং’। এত কিছু সবটা কি বাংলায় আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নাকি নেপথ্যে রয়েছে SIR তত্ত্ব? এই প্রশ্ন উড়িয়ে দিতে পারছেন না একাংশ। বাংলায় ভোটের পারদ যত চড়ছে, ততই যেন বুদবুদের মতো ফুলে উঠছে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর ইস্যু। তৃণমূল বলছে, একটা বৈধ ভোটার বাদ গেলেই পড়বে খাঁড়া। বিজেপি বলছে, ১ কোটি ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ যাবেই।
আরও পড়ুনঃ ‘একটা নাম বাদ গেলে বাংলাজুড়ে রক্ত-গঙ্গা বইয়ে দেব’, SIR নিয়ে হুঁশিয়ারি তৃণমূল নেতা রাজীবের
এসআইআর কী, কেন হয়, বিহার দেখে তা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে বাংলা ও বাঙালি। এই মুহুর্তে একটি বিষয় মস্তিষ্কে কাচের মতো স্বচ্ছ করে নেওয়া প্রয়োজন তা হল, এসআইআর এমন একটি বিশেষ ক্ষমতা, যা একমাত্র রয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতেই। ১৯৫০ সালে দেশে সংবিধান লাগু হওয়ার পর কমিশন দু’টি বিশেষ ক্ষমতা পেয়েছিল, একটি হল নির্বাচন করানোর দায়িত্ব। অন্যটি হল ভোটার কারা হবে, তা খতিয়ে দেখা। পক্ষান্তরে এই ভোটার খতিয়ে দেখার পদ্ধতিকেই বলা হয় নিবিড় পরিমার্জন।
সংবিধানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইনের অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী, একটি দেশে ভোটার কারা, তা যাচাইয়ের জন্য কমিশন সময় মেনে সমীক্ষা চালাতে পারে। বাংলায় শেষবার এই সমীক্ষা হয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর হতে চলেছে সম্ভবত ২০২৫ সাল অর্থাৎ এই বছর। তবে এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। কিন্তু হাবেভাবে বোঝাতেও কিছু কমতি রাখেনি তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ হইচই পড়ে গিয়েছে! বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা অ্যামাজনে
এবার প্রশ্ন হল SIR হলে আপনার কাছে কি জমা দেওয়ার জন্য় সেই প্রয়োজনীয় নথিগুলি রয়েছে? যে ১১টি তথ্যের কথা একেবারে প্রথম থেকে বলে আসছে কমিশন। এক নজরে দেখে নিন কী কী নথি-তথ্য় প্রয়োজন –
- আপনি রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হলে সেই সংক্রান্ত নথি।
- যাঁরা ১৯৮৭ সালের ১লা জুলাইয়ের আগে জন্মেছেন, তাঁদের সেই সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য। বলে রাখা প্রয়োজন, বিহারে এসআইআর-র সময় প্রথম দিকে এই ক্ষেত্রে জন্ম শংসাপত্র চেয়েছিল বা জোর দিয়েছিল কমিশন। কিন্তু পরে তাঁরা জানায়, ওই জন্মতারিখ এবং জন্মস্থানের সপক্ষে তালিকায় উল্লিখিত ১১টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি জমা দিলেই চলবে।
- ১৯৮৭ সালের পর জন্ম হওয়া ভোটারদের দিতে হবে জন্ম শংসাপত্র।
- থাকতে হবে ভারতীয় পাসপোর্ট।
- জমা দিতে হবে স্বীকৃত বোর্ড বা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র। এক্ষেত্রে মাধ্যমিকের সার্টিফিকেটও চলতে পারে।
- দিতে হবে রাজ্য সরকার প্রদত্ত বাসিন্দা শংসাপত্র বা ডোমিসাইল সার্টিফিকেট।
- কেউ যদি বনাঞ্চলে থাকেন, সেক্ষেত্রে বন দফতর প্রদত্ত শংসাপত্র।
- কেউ যদি সংরক্ষিত সম্প্রদায়ের হন, তাঁর ক্ষেত্রে সেই সংক্রান্ত নথি।
- এনআরসি শংসাপত্র (যদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে হয়ে থাকে)।
- এছাড়াও জমা দেওয়া যেতে পারে, রাজ্য সরকার প্রদত্ত ফ্যামিলি রেজিস্টার।
- জমি থাকলে তার নথি অর্থাৎ দলিল বা পরচা
অবশ্য কারওর যদি শেষবার এসআইআর হওয়ার পর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকে অর্থাৎ বাংলার ক্ষেত্রে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকে, সেক্ষেত্রে তাঁর এই সব নথি জমা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই।
এই এসআইআর নিয়ে সবচেয়ে চর্চিত প্রশ্ন হল আধার কার্ড কি মান্যতা পাবে? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, শুধুমাত্র বিহারে আধার কার্ডকে দ্বাদশ নথি হিসাবে যুক্ত করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে এটি প্রামাণ্য নথি নয়, পরিচয় প্রদানকারী নথি। অর্থাৎ কমিশনের কাছে আধার কার্ড কারওর নাগরিকত্বের প্রমাণ করে না। বরং পরিচয়পত্রের প্রমাণ মাত্র। সেই একই নিয়ম দেখা যেতে পারে বাংলার ক্ষেত্রেও। গত মাসে সব রাজ্যে সিইওদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, সেখানেই বাংলার ক্ষেত্রে দ্বাদশ নথি হিসাবে আধার কার্ডকে মান্যতা দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছিল, যেহেতু প্রামাণ্য পত্র নয়। তাই আধার কার্ডের সঙ্গে ওই ১১টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি নথি সমীক্ষায় নাম তুলতে ইচ্ছুক ভোটারদের জমা দিতে হবে। বলে রাখা ভাল, এই বৈঠকে উঠেছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কথা। বাংলার সিইও-কে রাজ্য আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল স্বাস্থ্যসাথীকে কার্ডকে এসআইআর-এর নথির তালিকাভুক্ত করার। যার ভিত্তিতে সেই প্রস্তাব দিল্লির বৈঠকে পেশ করেন রাজ্যের সিইও। কিন্তু এই কার্ড নাগরিকত্বের প্রামাণ্য না হওয়ায় তা খারিজ করে নির্বাচন কমিশন।