“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
কোলকাতা থেকে ট্রেন ধরে বাড়ীতে পৌঁছে অনিল দেখে ডাক্তারবাবু তার শেষ আশা ছেড়ে দিয়ে বিদায় নিতে চায়। অনিলকে ঘরে ঢুকতে দেখে ডাক্তারবাবু বলে, “অনিলবাবু, আপনার মায়ের এটা শেষ সময় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, কখন কোন সময় কি হয়ে যাবে বলা মুশকিল। ঈশ্বরের কৃপায় আর আপনাদের সেবায় যতদিন উনি জীবিত থাকতে পারেন সেটা দেখা। এখন আমি আসছি। ” এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাক্তারবাবু ঘর ছেড়ে চলে যায়।
অনিল মায়ের বিছানার কাছে গিয়ে বসে মায়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে, “তোমাকে এখন পুরো বিশ্রাম নিতে ডাক্তারবাবু বললেন। তারপর তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন: Bangladesh: ৫৩ বছর পর বাংলাদেশে “এন্ট্রি” পাকিস্তানি সেনার, চিন্তা বাড়ছে ভারতের
কৃষ্ণাদেবী ছেলের নিছক আশ্বাসের কথা শুনে মুখ হা করে কিছু বলতে চায়ছিল কিন্তু পারে না।
কতগুলো অস্ফুট শব্দ তার মুখ থেকে বার হল, তার কিছু শব্দ বুঝা গেল আর কিছু গেল না। শুধু কৃষ্ণাদেবী শিউলীর দিকে হাত বাড়িয়ে কিছু ইঙ্গিত দেয়, তা দেখে শিউলী কৃষ্ণাদেবীর দিকে এগিয়ে যায়। কৃষ্ণাদেবী ছেলের একটা হাত শিউলীর একটা হাত একসাথে করে বলে, “বৌ….মা…কে …….সুখী……..রাখ…বি……..” , কথাগুলো বলতে তার ভীষণ কষ্ট হয়। তারপর আলমারির দিকে হাত বাড়িয়ে ইঙ্গিত করে। অনিল মায়ের নির্দেশমত আলমারি খুলে একটা দলিল নিয়ে এসে মায়ের হাতে দেয়। কৃষ্ণাদেবী সেই দলিল অনিলকে দিয়ে বলে, “এটা …..তোর……..বা..বা…… তোর……..জন্য….” বলে ইঙ্গিতে কথাটা শেষ করে। ছেলের হাতে স্বামীর উপার্জিত সম্পত্তি দিয়ে একবার স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। শিউলী গ্লাসে করে তার মুখে একটু একটু করে জল খাওয়াতে থাকে। কিছু জল পান করে আর কিছু জল গাল বেয়ে বিছানার বালিশে পড়তে থাকে। একসময় সমস্ত জল গাল বেয়ে বালিশে পড়ে যায়। তাই দেখে শিউলী চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, “মা”।
আরও পড়ুন: Former prime Minister Died: উদারনীতির জনক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ প্রয়াত
অনিল নির্বাক দর্শকের মতো মায়ের মুখের মিষ্টি হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। মা যেন চোখের ইশারায় অনেক কিছু বলছে। ‘আই খোকা আই, আমার বুকে আই।’ আজ অনিল নিজেকে সেই ছোট্ট শিশু, তাই গুটি গুটি পা করে মায়ের কাছে এগিয়ে যায়। শিউলী অনিলের এই অদ্ভূত আচরণে অবাক হয়ে যায়। অনিলের চোখে কোন জল নেই, ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। শিউলী অনিলকে একটা হালকা ধাক্কা দেয়। বলে, “মা নেই। ” শিউলীর কথা শুনে অনিলের হুশ হয়, মা হারা ছোট্ট শিশুর মতো কেঁদে উঠে। বিছানায় শুয়ে থাকা মায়ের বুকের উপর আছাড় খেয়ে অনিল “মা, মা,মা, মা” করে ডাকতে থাকে ।।।
—- —— —– সমাপ্ত——- ——