সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
একটা অংশের মানুষের জীবনে অন্ধকারটা কি সারাজীবনের? যাদের লড়াইটা একটু অন্য রকম, আর পাঁচজনের মতো নয়। তাদের পুজোটাও একেবারে অন্যরকম, আর পাঁচ জনের মতো নয়। একটা ‘অলিখিত’ সামাজিক চাপেই বাধ্য হয়েই যেন সেই ‘নিষ্ক্রমণ’। সমাজের ঘেরাটোপের বাইরে থেকে পুজো উদযাপন। কিন্তু জীবনের অন্ধকার হয়তো সেই সামান্য আলোকবিন্দুকেও গ্রাস করতে সক্ষম। তেমনটাই হল এবার।
আরও পড়ুনঃ অগণিত ভক্তের আনাগোনায় উমার আরাধনা; বেলুড় মঠে সাড়ম্বরে সম্পন্ন মহাষ্টমীর কুমারী পূজা
জলপাইগুড়ির যৌনপল্লিতে শোনা গেল মন খারাপের সুর। এই বছরটা যেন তাদের জন্য হয়ে পড়ল ‘বর্ণহীন’, হারিয়ে যাচ্ছিল ‘জৌলুস’। কারণ, জৌলুস ফেরানোর ক্ষমতা যাদের হাতে রয়েছে, সেই ‘বাবুদেরই’ আনাগোনা কমেছে এই যৌনপল্লিতে। ফলত দুর্গোৎসবের আবহে চাঁদারও অভাব। যার জেরে কোনও মতেই সম্ভব হচ্ছিল না আয়োজন। যাদের দুয়ারের মাটি ছাড়া অসম্ভব দুর্গোৎসব, তারাই বঞ্চিত হল উৎসবের আলো থেকে।
এই এলাকার ছেলেমেয়েরা বাইরের পুজো দেখতে যায় না। একটা ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্ব’ যেন না চাইতেই তাদের ঘিরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তাই সেই গন্ডি পেরনোর সাহস তারা দেখায় না কোনও দিনই। থাকে নিজেদের দুনিয়া নিয়ে। কিন্তু সেই দুনিয়ার যে একটা আলোকবিন্দু, এই দুর্গোৎসব, তা হারিয়ে গেলে কীভাবে চলবে? নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক যৌনকর্মীর সন্তান বললেন, ‘আগের মতো ব্যবসা হয় না। বাবুরাও আসেন না। সবাই লাটাগুড়ির দিকে চলে যায়। হোটেলে-হোটেলে অবৈধভাবে ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলত, এখানকার মেয়েরা নিজেদের পেট চালাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন। পুজোর টাকা কোথায় পাবেন?’
আরও পড়ুনঃ বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে পাকিস্তান; কোয়েটায় বোমা বিস্ফোরণ
এই পরিস্থিতিতে যৌনপল্লির ওই খুদেদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে আসে গ্রীন জলপাইগুড়ি নামক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাসের কানেই এই কথা ওঠে প্রথম। তারপর তিনি ওই সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর অষ্টমী দিন জলপাইগুড়ির ওই যৌন পল্লীতে একটি বিনে পয়সার বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সম্প্রতি, রাজ্যের দুর্গোৎসবের দরুন প্রতিটি ক্লাবকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাও কীভাবে পুজো নিয়ে অসম্ভব হয়ে উঠছিল যৌনপল্লির কমিটির কাছে? গ্রীন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস বললেন, ‘এখানকার মানুষরা বিশেষ বাইরে যান না। শিশু-খুদেদের কাছে পুজো বলতেই এই পল্লীর পুজোটাই। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী যদি আগামী বছর থেকে এখানেও আর্থিক অনুদান দেন তবে এই এলাকার বাসিন্দারা ভাল ভাবে পূজা করতে পারবেন।’