একটা সময় ছিল, যখন স্কুলপড়ুয়াদের দিন কাটত বইয়ের পাতায় আর সন্ধ্যা হত খেলাধুলোয়। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন। এক আঙুলের ছোঁয়াতেই চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে এমন সব দৃশ্য, যা মন গঠনের বয়সে বাধা তৈরি করছে।
পূর্ব বর্ধমানের স্কুলগুলোয় সম্প্রতি এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা লক্ষ করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অষ্টম, নবম শ্রেণির ছাত্রীরা প্রেমে জড়াচ্ছে, মোবাইলে আসক্ত হয়ে গোপনে বিয়ে করছে, এমনকি সন্তানের জন্মও দিচ্ছে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই।
একটি স্কুলের এক শিক্ষিকার কথায়, “ছাত্রী ক্লাস সেভেনে। হঠাৎই একদিন নিখোঁজ। পরে জানা গেল, সে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। এখন এক বছরের শিশুর মা।” শুধু একটি নয়, একাধিক স্কুলে এমন ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুনঃ হবে না ‘সমস্যা’ বাড়ি ফিরতে! অতিরিক্ত পরিবহন পরিষেবা মোহনবাগান দিবসে
মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারে ছাত্রীরা হারিয়ে ফেলছে বাস্তববোধ। ইউটিউব, রিলস, প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট— সবই এখন তাদের হাতের মুঠোয়। অল্প বয়সে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয় তারা, অথচ বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে এই প্রযুক্তির মারাত্মক প্রভাবে।
জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষিকারা বলছেন, কেবল পড়ুয়ারা নয়, অনেক অভিভাবকও বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি, যেখানে শিক্ষার প্রতি নজর কম আর মোবাইল হাতছাড়া করাও যেন অসম্ভব।
জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি ময়দানে নেমে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এগিয়ে এসেছে নাটক মঞ্চস্থ করে বাল্যবিবাহের ভয়াবহতা বোঝাতে।
আরও পড়ুনঃ হঠাতই এক ট্রেন্ড, গা ভাসিয়েছে ‘হুজুকে’ বাঙালি! সত্যিই কি আপনার ছবি বা তথ্য ব্যবহার করবে Facebook?
জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার স্পষ্ট জানিয়েছেন, “নাবালিকারা মোবাইলে কী দেখছে তা অভিভাবকেরা জানেন না। তাতে এমন কিছু দেখছে, যা তাদের মনোজগতে বড় প্রভাব ফেলছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।”
শিক্ষকরা বলছেন, শুধু প্রশাসনিক আইন বা স্কুলের নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়। অভিভাবক, সমাজ এবং শিক্ষক— তিনটি স্তরের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। কারণ, এই যুদ্ধে হারলে শুধু একজন কিশোরী নয়, পরাজিত হবে একটা গোটা প্রজন্ম।