পেপার বয় টু বিধায়কের পিএ, পথটা মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি করে দেখিয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদের ছাপোষা পরিবারের সন্তান নিতাই দত্ত ‘বেলা শেষে’ ফুলে ফেঁপে উঠেছেন বুঁদবুদের মতো। শহর হোক বা নিজের এলাকা মুর্শিদাবাদ, সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর সাম্রাজ্য। শুক্রবার সেই প্রতিপত্তিশালী নিতাইয়ের বাড়ি ও গোডাউনে অভিযান চালালেন ইডি আধিকারিকরা।
শুক্রবার সাতসকালে পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের অ্যাকশনে নামল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । বর্তমানে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু (Sujit Bose) ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্য়ান নিতাই দত্তের (Nitai Dutta) বাড়িতে অভিযান চালায় তাঁরা। ইডি সূত্রে খবর, পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এদিন মোট ১০ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে তারা। তল্লাশি চালানো হয়েছে নিতাই দত্তের একটি গোডাউনেও।
আরও পড়ুনঃ চাপ বাড়ল মন্ত্রী সুজিতের; সল্টলেকের অফিসের পর ইডির এবার রেস্তরাঁয় চোখ
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে প্রথম গ্রেফতার করেছিলেন সিবিআই। পরবর্তীতে তাঁর অফিসে তল্লাশি চালাতে গিয়েই উদ্ধার হয়েছিল পুর নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি। এরপর ধীরে ধীরে এই তদন্তে নাম জড়িয়েছে একের পর শাসকনেতা ও ঘনিষ্টের। নাম জড়িয়েছে মন্ত্রী সুজিত বসুর আপ্ত সহায়ক নিতাই দত্তেরও। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুর-নিয়োগ দুর্নীতির টাকা খাটিয়েই বিপুল সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন তিনি। কিন্তু এই ‘সাম্রাজ্য’ তৈরির সূত্রপাতটা কবে ঘটল? মুর্শিদাবাদের ছেলে কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন পুর-নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে?
মুর্শিদাবাদের ছেলে নিতাই দত্ত। কাজের সূত্রে বহুকাল আগেই চলে এসেছিলেন কলকাতায়। এখানে এসে বসবাস শুরু করেন লেকটাউনের দক্ষিণদাড়িতে। ২০০৮ সালে বাড়ি-বাড়ি খবর কাগজ দেওয়ার কাজ করতেন তিনি। রাজ্যে যখন তৃণমূল সরকার গঠন করল, সেই সময় কলেজ স্ট্রিটে বই-খাতাও বিক্রি করতেন নিতাই দত্ত। তবে এই সবের ফাঁকে আরও একটা কাজ ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন তৃণমূলের ‘ফুল-টাইম’ কর্মী। দিনভর থাকতেন বিধায়ক সুজিত বসুর সঙ্গে।
সময়ের সঙ্গে সেই ‘পেপার বয়’ হয়ে উঠলেন বিধায়ক সুজিত বসুর আপ্ত সহায়ক। সুজিত যত বড় হয়েছেন, ততই বেড়েছেন নিতাইও। দমকল মন্ত্রীর ছায়ায় ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সুজিতের ছায়াসঙ্গী থাকার পর্বেই নানা দুর্নীতি ঘিরে নিতাই দত্তের ভূমিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। বেড়েছে প্রতিপত্তি। বাড়ি, গোডাউন, রেস্তোরাঁ সবই তৈরি করেছেন তিনি। অবশেষে এই আপ্ত সহায়ক পদে থাকাকালীন আরও একবার ‘পদোন্নতি’ হয় নিতাইয়ের। একুশের কলকাতা পুরভোটে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ পান তিনি। কেউ কেউ বলেন, নিতাই দত্তের উত্থানের আরও একটা অধ্য়ায় তৈরি হয় এই ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার পরই।
আরও পড়ুনঃ হায় রে, ঘাশফুলের আমলে এসব কি হচ্ছে! সুজিত বসুর অফিসে হাজির ED; ১০ জায়গায় একসঙ্গে তল্লাশি
পুর নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে মোট ১৪টি পুরসভার নাম জড়ায়। যার মধ্যে একটি দক্ষিণ দমদম পুরসভাও। যার ভাইস চেয়ারম্যান এই নিতাই দত্ত। গতবছর তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় সাত পাতার একটি নথি উদ্ধার করেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি ছিল, পুরনিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি জড়িত নিতাই। এমনকি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামারহাটি পুরসভায় স্ত্রী ও ভাইকে নিতাই দত্ত চাকরি দিয়েছিলেন বলেই অভিযোগ তদন্তকারীদের।
কিন্তু নিতাই দত্তের সঙ্গে সুজিত বসুর নাম কেন জড়াল? মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক ছিলেন বলেই কি সুজিত বসুকে আতসকাচের নীচে নিয়ে আসেন আধিকারিকরা? তেমনটা ঠিক নয়। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, যে সময়কার দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে, ওই সময় দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন সুজিত বসু।