মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুর্শিদাবাদ সফরের ঠিক আগের দিন সেখানকার সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের রিপোর্ট ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হলো। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে কিছুদিন আগে মূলত মুর্শিদাবাদ ও মালদার কিছু অংশে যে সব এলাকায় অশান্তি হয়েছিল, সেখানে ঘুরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস।
একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বোসের মুর্শিদাবাদ–রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে (যার সত্যতা ‘বঙ্গবার্তা’ যাচাই করেনি)। যেখানে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘রাজ্য প্রশাসন যেখানে কার্যকরী ভাবে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিক আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।…এটা বলা বাহুল্য যে, পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তা হলে সংবিধানের ৩৫৬ ধারাও রয়েছে।’
আরও পড়ুন: বেপরোয়া গতি! উল্টোডাঙা উড়ালপুলে ভোরের ‘জয়রাইড’ পরিণত দুঃস্বপ্নে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যদি রাজ্যপাল এই রিপোর্ট পাঠিয়েই থাকেন, তা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদ সফরের ঠিক আগের দিন কী ভাবে তা প্রকাশ্যে চলে এল, সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। রিপোর্টে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অ্যাক্ট–১৯৫২ আইন অনুযায়ী একটি কমিশন গঠন করা হোক যারা সামগ্রিক ঘটনাবলি খতিয়ে দেখবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না–হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করবে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে বিএসএফের ফাঁড়িও তৈরি করা হোক।’
এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে রবিবার রাজভবনের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এই রিপোর্ট এখন কেন সামনে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জোড়াফুল নেতৃত্ব। তৃণমূলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘যে রিপোর্ট গোপনীয় হওয়ার কথা, তা সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে উনি হাওয়া গরম করতে চাইছেন। উনি এটাই প্রমাণ করলেন, বিজেপিকে খুশি করতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ওঁর এই পরিকল্পনা সফল হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হবে। রাজ্যের মানুষও চ্যালেঞ্জ করবে।’
মালদা–মুর্শিদাবাদ সফর সেরে রাজ্যপাল বোস অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি কবে তাঁর রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। এই রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সোমবার মুর্শিদাবাদে যাবেন। কোনও সমস্যা থাকবে না। কোনও সমস্যা এখন নেই–ও। রাজ্যপাল কী রিপোর্ট দিচ্ছেন, না–দিচ্ছেন সেটা ওঁর ব্যাপার। উনি অসুস্থ রয়েছেন, উনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠুন।’
আরও পড়ুন: ভারতকে কোহিনুর ফিরিয়ে দেওয়া হবে? ব্রিটেনের সংস্কৃতি মন্ত্রীর উত্তরে জল্পনা
রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল প্রশ্ন তুলবে, এটা প্রত্যাশিতই। কিন্তু বোসের এই রিপোর্ট নিয়ে বঙ্গ–বিজেপিও খুব বেশি উৎসাহী নয়। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে রাজ্যপাল একটু নড়ে বসেছেন। রাজ্যপাল যাঁদের কাছ থেকে হাতেখড়ি নিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে উনি কবিতা লিখবেন, গান লিখবেন, প্রবন্ধ লিখবেন, নাকি রিপোর্ট পাঠাবেন, তা ওঁর ব্যাপার।
এখানে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তবে কোনও নির্বাচিত সরকারকে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে ফেলে দেওয়ার পক্ষপাতী বিজেপি নয়।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘বামপন্থীরা কখনও ৩৫৬ ধারার পক্ষপাতী নয়। বিরোধী থাকার সময়ে তৃণমূলই বাংলায় ৩৫৬ জারি করার কথা বলত। বিজেপি রাজভবনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। এখন কেন তারা রাজ্যপালকে নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তা তারাই বলতে পারবে! আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, সরকার না–চাইলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি হয় না।’
মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তা–ও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে অনেক জায়গায় কাঁটাতার না–থাকার কথাও বলা হয়েছে। এই রিপোর্টে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১৩৮টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। অশান্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনশোর বেশি ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। জাফরাবাদে পিতা–পুত্রকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত–সহ চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে।’