কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন কোনও ভূতুড়ে বাড়ি। অথচ একসময় এই বাড়ির নীল-সাদা রংটা বেশ জ্বলজ্বল করত। আট বছর ধরে ব্যবহার হয় না র্যাশন দোকানের মডেল ফ্রেয়ার প্রাইস শপ (ন্যায্যমূল্যের র্যাশন দোকান)। একটা নয়, একাধিক বাড়ি। বিভিন্ন চা বাগানে বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে দোকানগুলি। কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তার কোনও দিকনির্দেশ নেই। প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছেও নেই কোনও তথ্য। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, যদি ব্যবহারই না করা হবে, তাহলে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দোকানগুলি বানানোর মানে কী?
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতেও নীল পুজোতে শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য উপচে পড়ছে ভীড়
এর আগে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল, ডিজিটাল র্যাশন কার্ড চালু হলেই এই দোকানগুলো চালু করা হবে। অথচ আট বছরেও কেন চালু করা গেল না। কেন? শিলিগুড়ি মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিক তারিক আনোয়ার চৌধুরী যেমন সাফ বলে দিলেন, ‘এই দোকানগুলোর বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এখন যে সব দোকান রয়েছে এবং নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো নিয়েই আমরা ব্যস্ত আছি।’ এমতাবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, তিনি এ বিষয়ে কিছু না জানলে আর কে জানবে? আর এটা কি সরকারি টাকা অপচয় নয়?
নকশালবাড়ি ব্লক সহ শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত বিভিন্ন চা বাগানে তৈরি ন্যায্যমূল্যের র্যাশন দোকানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের কোনও বালাই নেই। নজরদারির অভাবে বেহাল দোকানগুলি থেকে দরজা, জানলা, কাঠ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, পাইপ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ঢুকে অসামাজিক কাজকর্ম চলছে বলেও অভিযোগ উঠছে। যদিও বিষয়টি ‘জানা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ। তবে খেঁাজ নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
দার্জিলিং জেলার সমতল অঞ্চলের সব চা বাগান মিলিয়ে ১২৬টি ন্যায্যমূল্যের র্যাশন দোকান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যার মধ্যে নকশালবাড়ি ব্লকের ১৫টি চা বাগানের জন্য ৯টি দোকান তৈরি করা হয়। এই ধরনের র্যাশন দোকান তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল, স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যাতে দোকানগুলি পরিচালনা করতে পারেন। পাশাপাশি চা বাগানের বাসিন্দাদের আরও সহজে র্যাশন সরবরাহ করা যায়। ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে ব্লকের বিভিন্ন চা বাগানে প্রায় ৮১ লক্ষ টাকার টেন্ডার করে বিডিও’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যের র্যাশন দোকানগুলি তৈরি করা হয়। প্রতিটি দোকানে ছিল র্যাশনের খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখার তিন রুমবিশিষ্ট গোডাউন। শৌচালয়, বিদ্যুৎ সংযোগ তো ছিলই। কিন্তু আট বছর হতে চলল, দোকানগুলি চালু করা যায়নি।
দোকানগুলির পরিস্থিতি কতটা শোচনীয়, বেলগাছি চা বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনে গেলেই বোঝা যায়। এখানে থাকা ন্যায্য মূল্যের র্যাশন দোকানের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গোবর। লোহার দরজা, জানলা সব গায়েব। ঘরের চারদিকে খালি মদের বোতল ছড়ানো। স্থানীয় বাসিন্দা প্রেমপ্রকাশ ওঝা রাখঢাক না করেই যেমন বলে দিলেন, ‘এই ঘর সরকার বানিয়েছে নেশার আসর বসার জন্যই।’
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মণিরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঞ্জন চিকবড়াইকও। তঁার কথা, ‘এই ঘরগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। ব্লক প্রশাসনকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, প্রতিটি দোকান স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি।’ আদৌ দোকানঘরগুলি ব্যবহার হবে? প্রশ্ন থেকেই গেল।