আপাত নিষ্পাপ পনিরও আর নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় শিশুর খাওয়ার দুধও। এমনকি, মিষ্টির দোকানে যে ক্ষীরের মিষ্টি খাচ্ছেন, তাতেও থাকতে পারে ‘বিষ’! ‘সাদা বিষ’।
এত দিন চিনিকেই ‘হোয়াইট পয়জ়ন’ বা ‘সাদা বিষ’ বলা হত। দেখা যাচ্ছে, ভেজালের দুনিয়ায় দুধসাদা পনিরও সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে চিনির সঙ্গে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৪২৮০ কেজি ‘বিষাক্ত’ পনির উদ্ধার করেছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। উদ্ধার হয়েছে ভেজাল দুধও। দৃষ্টান্ত তৈরি করতে বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত খাবার মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন তাঁরা।
গত সাত দিনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ওই নকল পনির উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা এফএসএসএআই। তারা এ-ও জানিয়েছে যে, ওই পনির এতটাই অস্বাস্থ্যকর যে, তা খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া, অ্যালার্জি, কিডনির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই, এমনকি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না!
আরও পড়ুনঃ কঠোর থেকে কঠোরতম পাহারার নির্দেশ! তিস্তার উপরে থাকা সেতুগুলোয় বাড়তি নজরদারির
বিদেশে যেমন চিজ়, এ দেশে ততটাই জনপ্রিয় পনির। তার একটা বড় কারণ হল, ভারতের অনেক রাজ্যে নিরামিষভোজীরা সংখ্যায় বেশি। এক সমীক্ষার ফল মানলে, ভারতীয়দের মধ্যে ৩৯ শতাংশই আমিষ খান না। আবার এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা মাছ-ডিম খেলেও মাংস খান না। এঁদের হার ৮১ শতাংশ। বিপুল সংখ্যক এই মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন প্রোটিন সংগ্রহ করেন পনিরের মতো খাবার থেকেই। সেই পনিরই যদি স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হয়, তবে তা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে দেশের খাদ্য সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা এফএসএসএআই-ও দায় পুরোপুরি এড়াতে পারবে না। হয়তো তাই তড়িঘড়ি নকল পনির উদ্ধার অভিযানে নেমেছিল খাদ্য সুরক্ষা দফতর। সেই অভিযানে যা যা উদ্ধার হয়েছে, তার খতিয়ান অবাক করে দেওয়ার মতোই।
শুধু উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর থেকেই মিলেছে ৭০০ কেজি নকল পনির এবং সাড়ে চারশো লিটার নকল দুধ! আগ্রায় একটি মালবাহী গাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে ৮০০ কেজি নকল পনির। সব মিলিয়ে শুধু উত্তরপ্রদেশ থেকেই ২০০০ কেজি নকল পনির মিলেছে। যে উত্তরপ্রদেশ তার গোসম্পদের জন্য খ্যাত, সেখানে দুধের আকাল হল কি?
নকল পনির পাওয়া গিয়েছে ঘরের পাশেই, প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে। ধানবাদ থেকে ৭৮০ কেজি নকল পনির এবং ৮০ কেজি ভেজাল দেওয়া খোয়াক্ষীর উদ্ধার করেছে সে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা দফতর। এ ভাবেই দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যের শহরে শহরে ঘুরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কেজি পনির উদ্ধার করা হয়েছে। আর সেই তথ্য এফএসএসএআই দিয়েছে তাদের সমাজমাধ্যমের পাতায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, বড় বড় পনিরের তাল মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পোঁতার কাজ চলছে।
১। এই ধরনের নকল পনির অনেক ক্ষেত্রেই তৈরি করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর শ্বেতসার (স্টার্চ) এবং অপরিশ্রুত জল দিয়ে। যে জলে ইকোলাই সালমোনেল্লার মতো ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থাকতে পারে, যা পেটের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া ওই স্টার্চ বা শ্বেতসারও অন্ত্র এবং পাকস্থলীর ক্ষতি করতে পারে, যা থেকে গ্যাস, হজমের সমস্যা, ডায়েরিয়া হতে পারে।
২। অনেক সময় যে দুধ থেকে পনির তৈরি হয়, তাতে ইউরিয়া থাকছে। অথবা থাকছে সিন্থেটিক দুধ, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
৩। ভেজাল পনিরে থাকছে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকও, যা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। এবং অ্যালার্জি হলে ত্বকে র্যাশের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, গলা ফোলার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
৪। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভেজাল হিসাবে পনিরে মেশানো হচ্ছে ফর্মালডিহাইড। যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। দুর্বল করে দিতে পারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকেও।
আরও পড়ুনঃ চমকে গেলেন সকলে! আলিপুরদুয়ারে স্কুলের দরজায় ব্যবহৃত কন্ডোম! লজ্জায় মাথা হেঁট
বাড়িতে যে পনির খাচ্ছেন, সেই পনির সুরক্ষিত কি না জানার জন্য কী করবেন, তা বলে দিয়েছে এফএসএসএআই। তারা বলছে—
১। প্রথমে পনির গরম জলে ডুবিয়ে রাখুন।
২। তার পরে সেই জলে কয়েক ফোঁটা টিংচার আয়োডিন দিন।
৩। যদি রং বদলে নীল হয়ে যায়, তবে পনিরে ভেজাল রয়েছে।
৪। যদি রং না বদলায়, তবে হয়তো সেটি ভেজালমুক্ত।