পূর্ব হিমালয়ের অরুণাচল প্রদেশে ক্রমশ দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধিই এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মূল কারণ। মাত্র এক বছরে অরুণাচলের কিছু অঞ্চলে প্রায় ১.৫ মিটার বরফ গলনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে হিমবাহ সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং গ্লেসিয়াল লেক বা হিমবাহজাত হ্রদের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করছে।
আরও পড়ুনঃ কলকাতা পেরিয়ে দেখে আসুন হুগলি জেলার বনেদি বাড়ির পুজো, রইল বাছাই করা কিছু পুজোর হদিস
গোরিচেন পর্বতশ্রেণি ও হিমবাহ পর্যবেক্ষণ:
সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড হিমালয়ান স্টাডিজ সম্প্রতি তাওয়াং জেলার গোরিচেন পর্বতশ্রেণির খাঙ্গরি হিমবাহে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সেন্টিনেল-২ উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ম্যাগো চু অববাহিকার হিমবাহগুলো ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এর ফলেই আশেপাশের হ্রদগুলো আরও বড় হয়ে উঠছে।
সিকিম বিপর্যয়ের আশঙ্কা:
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, অতিরিক্ত বরফ গলে যাওয়ার ফলে হিমবাহ সংলগ্ন হ্রদগুলো ভয়ঙ্করভাবে ফুলে উঠছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদে হিমবাহ ধসের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সেই ঘটনা এখনো স্মৃতিতে অমলিন। একই ধরনের বিপর্যয় অরুণাচলের রানি হ্রদ এলাকায় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের পর্যবেক্ষণ:
সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (CWC)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৪০০-র বেশি হিমবাহজাত হ্রদের জল বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক হ্রদ অরুণাচল প্রদেশে (১৯৭টি)। এরপর রয়েছে লাদাখ (১২০), জম্মু ও কাশ্মীর (৫৭), সিকিম (৪৭), হিমাচল প্রদেশ (৬) এবং উত্তরাখণ্ড (৫)।
আরও পড়ুনঃ স্কুলে গার্ড নেই, মাসি নেই, নেই বাচ্চাদের নিরাপত্তা! কোচবিহার সদর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে এত সমস্যা!
জলবায়ু পরিবর্তনই মূল কারণ:
বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নই হিমবাহ গলনের প্রধান কারণ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, হ্রদগুলো অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠছে, এবং তার ফলে হিমবাহ সংলগ্ন অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
অরুণাচলে হিমবাহ গলনের এই প্রবণতা শুধু স্থানীয় জনগণের জীবন ও জীবিকার জন্য নয়, গোটা পূর্ব হিমালয় অঞ্চল এবং এর নিচের নদী অববাহিকার জন্য এক বড়ো হুমকি। তাই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সতর্কতা ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি।