অপদেবতা তাড়ানোর যজ্ঞ শুরু হয়েছিল গত শুক্রবার থেকে। সেই থেকে রোজই কোনও না কোনও উদ্দেশ্যে যজ্ঞ হচ্ছে। তবে মহাযজ্ঞ মঙ্গলবার। জগন্নাথদেবকে আবাহনের উদ্দেশ্যে। মঙ্গল সকাল থেকে শুরু হয়ে তা চলবে বিকেল পর্যন্ত। বিকেলে পূর্ণাহুতি দেবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের পুজোপাঠ এবং যজ্ঞে যেমন রয়েছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতাপতি, তেমনই রয়েছেন ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা মুখপাত্র রাধারমণ দাস। তাঁদের সঙ্গেই থাকছেন আরও সাধু-সন্ন্যাসী। শুক্রবারের যজ্ঞ ছিল বাস্তুপুরুষের উদ্দেশে। সোমবার রাধারমণ বলেন, ‘‘তার একটি অংশ হল ‘ভূতপ্রেত’ তাড়ানো। যাতে মন্দিরচত্বরে অনভিপ্রেত কিছু না থাকে। সেই যজ্ঞের পর অপদেবতাদের উদ্দেশে ‘দেবতার প্রসাদ’ অর্পণ করা হয়েছে। এই ভাবেই পর পর নানা যজ্ঞ চলছে। সঙ্গে চলছে বিষ্ণুশাস্ত্রনাম এবং হরিনাম।’’
মঙ্গলবার মহাযজ্ঞ শুরু সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে। মাঝে কিছু ক্ষণের বিরতি। তার পর বিকাল ৫টা নাগাদ পূর্ণাহূতি দেবেন মমতা। বুধবার জগন্নাথের প্রাণপ্রতিষ্ঠা এবং মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন। তারই শুরু হবে মঙ্গলবার মহাযজ্ঞের মাধ্যমে। আবার বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে পৃথক যজ্ঞ। মন্দিরচত্বরে যেমন সাধুরা যজ্ঞ করবেন, তেমনই মূল মন্দিরের ভিতরে যে জগমোহন মন্দির নির্মিত হয়েছে, সেখানে যজ্ঞ করবেন ইসকনেরা সেবায়েতরা। সব যজ্ঞেই ব্যবহার করা হচ্ছে আম এবং বেলকাঠ।
জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের ব্যবস্থাপনার জন্য সপ্তাহ দেড়েক আগে নবান্ন সভাঘরে প্রস্তুতি বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানেই তিনি বলেছিলেন, পুরীতে যেমন খাজা বিখ্যাত, তেমনই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গজা রাখা হবে। থাকবে পেঁড়াও। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে পেঁড়া, গজার সঙ্গে রসগোল্লার মতো মিষ্টিও তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মিষ্টিতে বাংলার ছোঁয়াও রাখা হচ্ছে। মহযজ্ঞের সময়েও বাংলার মিষ্টি উপাচারে ব্যবহার করা হবে। মহযজ্ঞের পরে জগন্নাথ মূর্তির শয়ন হবে পুষ্প বিছানো শয্যায়।
বুধবার প্রথম যে যজ্ঞ হবে, সেই যজ্ঞের সময় বিগ্রহকে চার দিক দিয়ে ঘেরা হবে সোনা, রূপা, এবং তামার তার দিয়ে। সেই তিন ধাতুর ‘কার’ বাঁধা থাকবে প্রধান পুরোহিতের কোমরে। রাধারমণের কথায়, ‘‘দেবতার সঙ্গে আত্মিক সংযোগের কারণেই এই প্রক্রিয়া করা হয়ে থাকে।’’ বিগ্রহের সামনেই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে যজ্ঞকুণ্ড এবং কুম্ভকুণ্ড (ঘটে জল রেখে তৈরি হয় কুম্ভকুণ্ড)। তার পরে শুরু হবে জগন্নাথের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। জগন্নাথের সঙ্গে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
আরও পড়ুন: জেএনইউতে ফিকে হচ্ছে বাম-অতিবাম দাপট! আধিপত্য থাকলেও ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এবিভিপি
প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্রক্ষণ বুধবার সকাল ১১টা ১০ থেকে ১১টা ৩০ মিনিট। ওই ২০ মিনিটের মধ্যেই দেবতার সর্বাঙ্গে কুশের স্পর্শ করা হবে। রুদ্ধ দরজার ভিতরে হবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা। সাধুসন্ন্যাসীরাই সেই প্রক্রিয়া করবেন বলে জানিয়েছেন ইসকনের রাধারমণ। প্রাণপ্রতিষ্ঠার পরেই জগন্নাথের স্নান এবং বস্ত্র পরিধানের প্রক্রিয়া সারা হবে। তার পরে ৫৬ ভোগ অর্পণ করা হবে জগন্নাথের উদ্দেশে। সেখানেও নানা পদের সঙ্গে থাকবে মিষ্টি। যাতে গজা, পেঁড়া, রসগোল্লাও জায়গা পাবে। তার পরে দ্বারোদ্ঘাটন পর্ব। অক্ষয় তৃতীয়ার বিকালে শুভ সময় বিকাল ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিট। ওই সময়েই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জগন্নাথের উদ্দেশে প্রথম সন্ধ্যারতিও করবেন মুখ্যমন্ত্রীই।