ডিভিসির বাঁধ থেকে অনিয়ন্ত্রিত জল ছাড়াকে ঘিরে রাজ্য-ডিভিসি দ্বন্দ্ব চরমে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ডিভিসির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যকে না জানিয়েই ১৮ জুন থেকে একের পর এক দিন জল ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই ক্ষোভের রেশ না কাটতেই আরও বাড়ানো হল জলছাড়ার পরিমাণ।
আরও পড়ুনঃ সরকারি জমিতে বুলডোজার চালানোর নির্দেশ জেলাশাসকের! ‘JCB লাগাও, উসকো হঠাও…’
ডিভিসির দুই প্রধান জলাধার—মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে এখন ছাড়া হচ্ছে ৫৫ হাজার কিউসেক হারে জল। এর মধ্যে পাঞ্চেত থেকে ছাড়া হচ্ছে ৩৭ হাজার কিউসেক, মাইথন থেকে ১৮ হাজার কিউসেক। এর পাশাপাশি, বুধবার বিকেলে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকেও ৬০,১২৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। প্রশাসনিক মহলে আশঙ্কা, এই অনিয়ন্ত্রিত জলছাড়ার ফলে খানাকুল-সহ হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে ফের দেখা দিতে পারে বন্যা পরিস্থিতি।
রাজ্যের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই মাইথন ও পাঞ্চেতের জলধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে পলি জমার কারণে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ওই বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে ডিভিসি। তবে সেই জল ছাড়ার পূর্বে রাজ্যকে কোনও রকম সতর্কতা না দেওয়াই ক্ষোভের কেন্দ্রে।
এদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় টানা বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দামোদরের জলস্ফীতির ফলে প্রশাসন উচ্চ সতর্কতায়। জেলা শাসক পোন্নমবলম এস জানান, কাঁকসা ও অণ্ডালের কিছু নিচু এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আসানসোলের গাড়ুই এবং দুর্গাপুরের তামলা নালা, এই দুই জলনিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারের কাজ চলায় শহরে জলজট বেড়েছে।
আরও পড়ুনঃ অবশেষে পাওয়া গেল বন দপ্তরের ছাড়পত্র, বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে পাইপলাইন পাতার অনুমতি
ডিভিসি যদিও তাদের অবস্থানে অনড়। দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেটরি কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি সঞ্জীব কুমার জানান, “বাঁধগুলিতে উপরিভাগ থেকে একটানা বৃষ্টি এবং তেনুঘাট থেকে অতিরিক্ত জল আসার কারণে জলধারণ ক্ষমতা প্রায় পূর্ণ। জল না ছাড়লে বাঁধ বিপদসীমা পার করে যেতে পারে।”
রাজ্য যদিও ফের কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাঁধ সংস্কার ও পলি অপসারণে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে। কিন্তু বাস্তবে সে সব কবে হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তার আগেই ‘দুঃখিনী’ দামোদর আবার নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করছে বাংলা জুড়ে।