হাইকোর্টে বড় ধাক্কা খেলো রাজ্য় তথা স্কুল সার্ভিস কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে এসএসসি যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে তা বদল করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে চিহ্নিত অযোগ্যদের বাদ দেওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য। প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল সুপ্রিম নির্দেশে। এরপর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় এসএসসি। সেই বিজ্ঞপ্তি বদল করার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: এ কী কাণ্ড ঘটালেন বিধায়ক হুমায়ুন! পরপর লাথি, তারপর ঘাড়ধাক্কা! আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে
“এতবড় দুর্নীতির অভিযোগ! তারপরেও এটা বলবেন?”
গত ৩০ মে এসএসসি যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করে একযোগে ৯টি মামলা হয়েছে। আজ, সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে। শুনানির শুরু থেকেই এদিন নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের পাশেই দাঁড়ায় রাজ্য ও এসএসসি। কমিশনের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, “সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।” শুধু তাই নয়, কল্যাণের বক্তব্য, যদি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিতে পারেন, তাহলে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ব্যর্থ চাকরিপ্রার্থীরাও অংশ নিতে পারবেন না।
এ কথা শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কমিশনের কাছ থেকে এই ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত নয়।” অযোগ্য বলে যাঁরা চিহ্নিত হননি তাঁদের চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কল্যাণের বক্তব্য, নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের গোটা প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, এমনটা নয়। বিচারপতি বলেন, “এতবড় দুর্নীতির অভিযোগ! টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরেও এটা বলবেন?”
আরও পড়ুন: হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি! শমীক-দিলীপ আঁতাঁত! জল্পনা বিজেপিতে
‘বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘনকারী’, সওয়াল আদালতে
আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “বিজ্ঞপ্তি বেআইনি। শীর্ষ আদালত নির্দিষ্টভাবে জানিয়েছিল অযোগ্যদের নিয়োগ নয়।” যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের ১০ নম্বর অতিরিক্ত কেন দেওয়া হল? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।
যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের শিক্ষকদের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রও এদিন অভিযোগ তোলেন বিজ্ঞপ্তিতে, যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘনকারী। কারা বসতে পারবে পরীক্ষায়, সেটা স্পষ্ট বলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আইনজীবী আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা আছে, চিহ্নিত অযোগ্যরা কোনও সুযোগ পাবেনা পরীক্ষায় বসতে। তারপরেও যদি এসএসসি মনে করে যে প্রতারকদের বা জালিয়াতদের পুরস্কার দেবে, তারা দিতে পারে।”
আরও পড়ুন: আচমকা বিপর্যয়, ভোগান্তি যাত্রীদের; ব্যাহত মেট্রো পরিষেবা
“অযোগ্যরা আবার টিচার হিসেবে ১০ শতাংশ নম্বরের সুবিধা পাবে?”
কীভাবে অযোগ্যদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিচ্ছে এসএসসি, প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। কমিশনের তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরীক্ষায় সবাই বসতে পারবে। অযোগ্যরা বয়সের ছাড় পাবে না। যোগ্যরা বয়সের ছাড় পাবে। এটা আমার ব্যাখা, আদালত মানতে পারে নাও পারে।”
বিচারপতি এ কথা শুনে বলেন, “অযোগ্যরা পরীক্ষায় বসবে! যারা প্রতারণার কারণে অভিযুক্ত, সেই অযোগ্যরা আবার টিচার হিসেবে ১০ শতাংশ নম্বরের সুবিধা পাবে!”
আরও পড়ুন: গড়িয়ে পড়ছে পাথর; সেবকের বাঘপুলের কাছে বন্ধ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক
বাদ অযোগ্যরা, স্পষ্ট নির্দেশ
এরপর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অযোগ্যদের পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমার মধ্যেই সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আইনজীবী কল্যাণ বলেন, ‘কতবার তারা ফল ভুগবে, সাজা পাবে? ‘ বিচারপতি স্পষ্ট বলেন, “তারা প্রতারণা করে চাকরি পেয়েছে তাই তারা বাদ যাবে।”