বাঙালির ঘণ্ট রান্নার ঐতিহ্য আজকের নয়। দেশভাগ, ভিটেমাটি ছেড়ে আসা, ছিন্নমূলের ব্যথা তখনও নীল করেনি বাঙালিকে। মিলেমিশে এই অবিভক্ত বাংলাতেই তৈরি হয়েছে একের পর এক স্বাদ। মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে সমকালীন প্রবন্ধ, সবেতেই মেলে তার প্রমাণ। বাঙালি হেঁশেলে ফলের খোসা থেকে ডগা, কাণ্ড থেকে শিকড়, ফুল থেকে পাতা, সব কিছু দিয়েই তৈরি হয় নানা ব্যঞ্জন। শুক্তো, ঘণ্ট, ছ্যাঁচড়া, ছেঁচকি, চচ্চড়ি, ছক্কা, দোলমা, ডালনা— রেসিপির শেষ নেই। কচুর শাকের ঘণ্ট তেমনই একটি। দুই বাংলাতেই অত্যন্ত প্রিয় এই রান্নাটি। কচুর ডাঁটার সঙ্গে নারকেল, ভেজানো ছোলা, কখনও চিংড়ি, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে বেশ কষিয়েই রাঁধা হয় কচুর শাক। বর্ষার দিনে বাজারে ভাল কচু ওঠে। এই সময়ে কচুর শাকের ঘণ্ট রেঁধে দেখতেই পারেন। রইল নিরামিষ কচুর শাক রাঁধার একটি প্রণালী।
আরও পড়ুন: ত্বকের নানা সমস্যায় মুশকিল আসান হতে পারে ‘কেমিক্যাল পিল’
নিরামিষ কচুর শাকের ঘণ্ট
উপকরণ
৫০০ গ্রাম কচুর শাক
আধ কাপ নারকেল কোরা
১/৪ কাপ ছোলা ভিজিয়ে রাখা
২-৩টি শুকনো লঙ্কা
১ চামচ পাঁচফোড়ন
১ চামচ আদাবাটা
১ চামচ জিরেগুঁড়ো
১ চামচ ধনেগুঁড়ো
১ চামচ হলুদগুঁড়ো
আধ চামচ লঙ্কাগুঁড়ো
৩টি কাঁচালঙ্কা
৪ চামচ সর্ষের তেল
নুন ও চিনি স্বাদমতো
লেবুর রস বা তেঁতুলের ক্বাথ
প্রণালী
কচুর শাকের ডাঁটা ও পাতা ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। খেয়াল রাখবেন, কচি অংশগুলোই ব্যবহার করবেন। এ বার জলে নুন মিশিয়ে ভাল করে কচুশাক সেদ্ধ করে নিতে হবে। শাক সেদ্ধ হয়ে নরম হলে নামিয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন। হাত দিয়ে বা চামচ দিয়ে হালকা করে চটকে নিতে পারেন, তবে একাবারে মিহি করবেন না। অনেক সময়ে কচুতে গলা চুলকাতে পারে, তাই সেদ্ধ করার সময়ে সামান্য তেঁতুল বা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: দাঁড়িয়ে থাকল ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট জানকি এক্সপ্রেস; দুটো কাকের তুমুল ঝগড়া-মারপিট
সারা রাত ছোলা ভিজিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়। যে দিন রান্না করবেন, তার আগের দিন রাত থেকে ছোলা ভিজিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়। এই ছোলা নুন দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। তবে বেশি নরম করবেন না। নারকেল কুরিয়ে রেখে দিন। চাইলে ছোট ছোট টুকরো করেও নিতে পারেন।
এ বার কড়াইতে তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা ও পাঁচফোড়ন দিন। ফোড়নের সুগন্ধ বার হলে আদাবাটা ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে হালকা কষুন। এ বার সেদ্ধ করা কচুর শাক কড়াইতে দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। হলুদগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো এবং লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে নাড়ুন। তার পর দিন সেদ্ধ করা ছোলা এবং নারকেল কোরা। সামান্য চিনি দিতে পারেন। স্বাদমতো নুন দিন। আঁচ কমিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। যত ক্ষণ না শাকের জল শুকিয়ে যায়, তত ক্ষণ কষাতে হবে। মিশ্রণ ঘন হলে তখন ভাল করে ভাজুন। সামান্য তেল দিয়ে পারেন কড়াইতে। শাক একদম শুকনো হয়ে তেল ছাড়লে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন কচুর শাকের ঘণ্ট।