‘বিশ্বাসে নয়, যুক্তিতর্কে মুক্তি’ – এই স্লোগানকে সামনে রেখে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজন করা হল চন্দ্রগ্রহণ দেখার বিশেষ কর্মসূচি। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বা ব্লাড-কপার মুন (blood moon) ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৫৮ মিনিট থেকে দেখা যায় খালি চোখে। সেই দৃশ্য দেখতেই শত শত মানুষ দেখলেন মহাজাগতিক এই দৃশ্য।
জমায়েত হয়েছিল যাদবপুর-বাঘাযতীনের রায়পুর গার্লস হাইস্কুলের ছাদে, সিথির কাঠগোলা মাঠে, কসবা, তিলজলা, পার্ক সার্কাস, আনোয়ার শাহ রোড, ঢাকুরিয়া, বেহালা, গোবরা-সহ একাধিক জায়গায়।
আরও পড়ুনঃ গ্রহণ চলছে! ঢাকতে শুরু করেছে চাঁদ
সবচেয়ে বড় কথা যেখানে আশা দেখছে শহর তা হল, দর্শকদের সিংহভাগই ছিলেন ছাত্র-ছাত্রী। আয়োজনের দায়িত্বে ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ (কলকাতা জেলা শাখা), স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন ক্লাব।
চন্দ্রগ্রহণ মানেই নানা কুসংস্কারের বেড়াজাল। গ্রহণকালে খাবার খাওয়া যাবে না, জল স্পর্শ করা যাবে না, রাহু-কেতুর গ্রাস, স্নানের নির্দেশ ইত্যাদি।
আজন্ম চলে আসা সেই বিধিনিষেধ ভাঙতে আয়োজন করা এই জমায়েতের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেওয়া। তাই চোখে পড়েছে ভিন্ন ছবি। চা, বিস্কুট, মুড়িমাখা থেকে শুরু করে রাতের খাবার – সবই চলেছে নির্বিঘ্নে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদ প্রসারে কাজ করছে। তাদের বক্তব্য – চন্দ্রগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, কোনও অলৌকিকতা নয়। গঙ্গায় স্নান করলে পাপমোচন হয় না, রান্না করা খাবারে বিষক্রিয়া হয় না, আর ফেলে দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এই বার্তাই লিফলেট ও প্রচারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ সময় বাঁচাতে বিমানেই মালয়েশিয়া যাত্রা কুমোরটুলির মায়ের
আয়োজকদের মতে, চন্দ্রগ্রহণ শুধু বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগই নয়, পাশাপাশি বিজ্ঞানকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করারও এক বিরাট ক্ষেত্র। তাই কুসংস্কারকে অগ্রাহ্য করে মানুষকে যুক্তির পথে আনার লড়াই অব্যাহত থাকবে।
চাঁদ নিজে কোনও আলো দেয় না, সূর্যের আলো প্রতিফলিত করেই সে জ্বলে ওঠে। কিন্তু যখন পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়, তখন সূর্যের আলো চাঁদে পৌঁছতে পারে না। পৃথিবীর ছায়া ঢেকে দেয় চাঁদকে, আর তৈরি হয় চন্দ্রগ্রহণ (Full Lunar Eclipse)। তবে চাঁদ একেবারে অন্ধকার হয়ে যায় না। লালচে আভায় ভরে ওঠে তার চেহারা। এর কারণ, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যের আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। লাল রশ্মি সহজে ছড়িয়ে না গিয়ে চাঁদে পৌঁছয়, আর নীল আলো ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ফলে আকাশে ভেসে ওঠে গাঢ় লালচে চাঁদ, যাকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’।
প্রায় ৮২ মিনিট ধরে চলবে এই পূর্ণগ্রাস, যা শেষ হবে রাত ১২টা ২২ মিনিটে। এই সময়টুকুই আকাশে দেখা যাবে ‘ব্লাড মুন’।
ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে চাঁদের লাল রূপ দেখার সুযোগ বিরল। তাঁর সংস্থা এ সময় হাজার হাজার ছবি তুলবে চাঁদের। তিনি আরও জানিয়েছেন, চাঁদের পৃষ্ঠে ক্রমাগত উল্কা পতন ঘটছে, কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় চাঁদের উজ্জ্বলতার কারণে তা চোখে ধরা পড়ে না। তবে পূর্ণগ্রাসের সময়ে যদি তা ধরা যায়, তাহলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচিত হতে পারে।


                                    
