“মুক্তি“
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
বিবাহিত জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন সজল চক্রবর্তী সাধু হওয়ার সংকল্প করে। তাই একদিন নিশ্চিতপুর গ্রামের শেষ প্রান্তে আশ্রমে বিকালবেলায় গিয়ে হাজির হয়। আশ্রমটি বেশ শান্ত ও নিরিবিলি, সচলাচল এই আশ্রমে কেউ আসে না। গ্রামের লোকের দান করা খাবার খেয়ে সাধুর দিন কেটে যায়। সজল যখন আশ্রমে পৌঁছায় তখন সাধু ধ্যান করার জন্য তৈরী হচ্ছিলেন। সাধুকে প্রণাম করে সজল বলে, “হে ঠাকুর, এই বিবাহিত জীবন থেকে আমি কিভাবে উদ্ধার পাবো ?”
গেরুয়াবসনধারী সাধু একবার সজলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কেন রে বাছা, তোর আবার কি হলো ?”
সজল বলে, “হে প্রভু, আমার তিন বছর বিবাহিত জীবনে স্ত্রীর অমানবিক অপাশবিক অত্যাচারে আমার জীবন জর্জরিত। আমার কর্মের উপার্জনের সমস্ত অর্থ আমার পত্নী নিয়ে নেয়। সংসার চালানো, খাওয়া- দাওয়া সবকিছুই প্রায় বন্ধ। আমার পত্নী আমাকে কোনও দিন ভালোবাসেনি, শুধু টাকা আর সম্পত্তিকে ভালোবেসেছে। তাই নিজের আখের গুজানোর জন্য আমার উপর প্রতিদিন অত্যাচার করে। আমি ভয় আর লজ্জায় কারুকে বলতে পারিনা।”
সাধু সজলের কথাগুলো শুনে বলেন, “তোর কোন সন্তান আছে ?”
সজল মাথা নেড়ে বলে, “না”।
“তুই সন্তান নিতে চাস?”
সাধুর কথায় সজল বলে, “হাঁ বাবা, কিন্তু আমার পত্নী তা চায় না।”
“তাহলে তুই তোর পত্নীকে ছেড়ে দে। যে মানুষকে ভালোবাসে না, টাকা আর সম্পত্তিকে ভালোবাসে সে কোনোদিন সংসার করতে চায় না।” তারপর সাধু একটু থেমে বললেন, “তোকে দেখে মনে হয় তুই খেটে খাস। কি কাজ করিস?”
সজল তখন সাধুকে বলে, ” আমি বাজারে সব্জি বিক্রি করে সংসার চালায়। আয় আমার অল্প। ”
“হুঁ”, বলে সাধু মনে মনে বিড়বিড় করে, তারপর বলেন, “তোর কপালে অশেষ দুঃখ লেখা আছে। একটাই উপায় আছে , হয় তুই তোর পত্নীকে ত্যাগ কর না হয় সংসার ত্যাগ কর।”
সজল সাধুর কথা শুনার পর ভাবতে ভাবতে আশ্রম ত্যাগ করে।
এই ঘটনার দুই দিন পর, বিকালবেলায়। সজল সাধুর কাছে এসে উপস্থিত হয়। তার পরনের জামা ছেড়া, মাথা থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে, মুখ – হাত ও শরীর থেকেও রক্ত পড়ছে। সাধু সজলকে দেখে কিছুটা অনুমান করে বলেন, “কি রে বাছা, একি তোর এ অবস্থা।”
সজল কাঁদো কাঁদো কন্ঠে সাধুকে বলে, “বাবা, আমি আর বাঁচতে চায় না।”
“কেনরে?”
“আজ আমার কাছে সব কিছুই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমার পত্নী শুধু টাকা আর সম্পত্তি পাওয়ার জন্য আমার উপর শুধু অত্যাচার করে তা নয়, সে অন্য এক পরপুরুষের প্রতি আসক্ত। সে তাকে চায়। এতদিন আমার উপর অত্যাচার করত। আর আজকে সব জানতে পারায় সে আমাকে প্রাণে মারতে আসে। আমি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি।”
আরও পড়ুন: Couple War: ‘যুদ্ধ’ থামাতে তেড়ে এল জনগণ; বাইক থামিয়ে চুলোচুলি যুগলের, মারপিট রাস্তায় শুয়ে
“তাহলে তুই এখন কি করবি ভেবেছিস?”
সাধুর কথা শুনে সজল বলে, “বাবা, আজ আমি সংসারের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে আপনার স্মরণাপন্ন, আপনি যা ভালো বুঝবেন তাই করবো।”
সাধু সজলের মানসিক অবস্থা দেখে তাকে বললেন, “যা, আশ্রমের কাছের পুকুরে স্নান করে পবিত্র হয়ে ঠাকুরের কাছে রাখা নতুন বস্ত্র পরিধান করে আমার কাছে আয়। আমি তোকে দীক্ষা দিয়ে নতুন জীবন দান করবো।”
সজল সাধুর কথামতো পুকুরে স্নান করতে চলে যায়। আজ সে সংসারের সমস্ত মায়ার বাঁধন থেকে মুক্ত।