Wednesday, 30 April, 2025
30 April, 2025
Homeউত্তরবঙ্গTelevision: উধাও অ্যান্টেনা, স্মৃতিতে সাদাকালো টিভি

Television: উধাও অ্যান্টেনা, স্মৃতিতে সাদাকালো টিভি

আশির দশকের শুরুতে উত্তরবঙ্গে টেলিভিশনে মাত্র একটা-দুটো চ্যানেল দেখা যেত।

বাক্সবন্দি সাদাকালো টেলিভিশন। তার সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি অ্যান্টেনা। সঙ্গে গোল করে পেচানো তার। রিকশায় এ সব নিয়ে দোকান থেকে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতা। মুখে চওড়া হাসি। বহুদিনের স্বপ্ন একটা টিভি কেনা, আজ সফল হলো। ব্যাঙ্ক-লোন তখন এত সহজ ছিল না। ইএমআই কী, মানুষ তা জানতই না। প্রতি মাসে খরচ বাঁচিয়ে কিছুটা সঞ্চয় করে টেলিভিশন কিনতেন একটু পয়সাওয়ালা মধ্যবিত্তরা দূরকে নিকট করার যন্ত্রটি শুধু কিনলেই হতো না। সঙ্গে লাগত অ্যান্টেনার যোগ্য সঙ্গত।

কী রকম দেখতে ছিল অ্যান্টেনা?

লম্বা একটা রড। তার ওপর সমান্তরাল ভাবে বসানো ছোট ছোট অনেকগুলি রড। এটাই অ্যান্টেনা। তার একটা দিকের অ্যালুমিনিয়াম রড বাঁকিয়ে প্রায় ডিম্বাকৃতি করা থাকত। সেটাই সামনের দিক বা অ্যান্টেনার মুখ। অ্যান্টেনা বাঁধা হতো বাঁশের ডগায়। বাঁশের গায়ে লাগাতে হতো আরও একটি যন্ত্র, বুস্টার।

আরও পড়ুন: পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় দু’বছরেই বন্ধ স্প্যানিশ কোর্স! কেন?

সেই বাঁশ বেঁধে দেওয়া হতো বাড়ির ছাদে। কেউ আবার উঠোনেই লম্বা বাঁশে লাগাতেন। একতলা হলে বাইরে জানলার গ্রিল ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে টিভি দেখতেন পাড়ার অনেকে। আর যদি জানলার ধারে কোনও গাছ থাকত, বেয়েও অনেকে উঠে যেতেন বোকাবাক্সর আকর্ষণে। সেই সময়ে টিভিতে সিনেমা দেখানো হতো সপ্তাহে দু-দিন। শনিবার বাংলা আর রবিবার হিন্দি। অনেকেই হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতেন।

আশির দশকের শুরুতে উত্তরবঙ্গে টেলিভিশনে মাত্র একটা-দুটো চ্যানেল দেখা যেত। তখন বাংলাদেশ চ্যানেলের জন্য অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য ছিল কার্শিয়াং চ্যানেলের অ্যান্টেনার প্রায় দ্বিগুণ। এদের মুখও পরস্পরের বিপরীত দিকে রাখতে হতো। অ্যান্টেনার সঙ্গে লাগানো কালো বা নীল রঙের লম্বা তার ছাদ থেকে নেমে ঘরের ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে নিয়ে আসা হতো টেলিভিশনের পিছনে। তারপর লাগানো হতো ‘বেলুন’-এর সঙ্গে। সেটা টেলিভিশনের পিছনে আটকে দিলে ছবি দেখার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হতো।

অ্যান্টেনার বাঁশ যতই শক্ত ভাবে লাগানো হোক না কেন, দমকা হাওয়া, ঝড়বৃষ্টির সময়ে বা কাক বসলে তার মুখ ঘুরে যেতই। ব্যাস, টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে তখন বৃষ্টির মতো ঝিরিঝিরি ছবি।

পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে জলপাইগুড়ি শহরের দিলীপ বর্মা বলেন, ‘ঘরের পাশে লম্বা বাঁশে লাগানো ছিল অ্যান্টেনা। অনেক বাড়িতেই তখন বাঁশে-বাঁধা অ্যান্টেনা দেখেছি। ঝড়বৃষ্টিতে অ্যান্টেনা এ দিক ওদিক ঘুরে গেলে বাড়ির কেউ অ্যান্টেনা ঠিক দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে জানতে চাইত, টেলিভিশনে ছবি আসছে কিনা। ঘরের ভিতরে টেলিভিশনে চোখ রেখে একজনকে বলতে হতো-হ্যাঁ আর একটু বাঁদিকে, হচ্ছে না। আর একটু। ছবি যে বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন: শুধু অশান্তির আশঙ্কা নয়, উপদ্রব পকেটমারদেরও! বাংলাদেশে ঘোরা নিয়ে সতর্কবার্তা জারি আমেরিকার

তাঁর সংযোজন, ‘চিত্রহার’ এর মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন- ‘বুলন্দ ভারত কী বুলন্দ তসবির হামারা বাজাজ’, ‘সবকী পসন্দ নিরমা’, শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।’

অ্যান্টেনার ফেলে আসা গল্প আজও যেন বলে-এই আমিই একদিন মানুষকে ‘মালগুডি ডেজ’, রামায়ণ বা মহাভারতের মতো ভাইরাল সিরিয়াল দেখিয়েছি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাড়া ফেলে দেওয়া নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ সেও তো আমারই হাত ধরে। আজ ক্লান্ত আকাশে শুধুই বহুতলের ছবি। কেবল টিভি, ইন্টারনেট টিভির যুগে বাঁশের মাথায় এমন অ্যান্টেনার যেমন দেখা মেলে না, তেমনি সাদাকালো এনালগ টেলিভিশন আর দেখা যায় না। তার ‘সাম্রাজ্য’র যে পতন হয়েছে।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন