ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল কলকাতা। সেনা কর্তৃপক্ষ মঞ্চ সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতেই রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে পৌঁছেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরস্পষ্ট অভিযোগ, সেনাকে দিয়ে মঞ্চ ভাঙিয়েছে বিজেপি। আবার সেনাবাহিনীর সাফ কথা, কথার খেলাপ করাতেই মঞ্চ সরাতে বলা হয়েছে।
ইস্টার্ন কমান্ডের তরফে জানানো হয়েছে, ময়দানের মতো সেনা-অধীনস্থ এলাকায় সভা বা অনুষ্ঠান করার অনুমতি সর্বোচ্চ দু’দিনের জন্য দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও সেই কথাই বলা আছে। এর বেশি সময়ের জন্য অনুমতি নিতে হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে। অথচ দু’দিনের অনুমতি নিয়ে প্রায় ১ মাস ধরে অস্থায়ী প্যান্ডেল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও আয়োজকরা সেটি সরাননি। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশকে জানিয়ে সেনাবাহিনীর তরফে মঞ্চ খোলার ব্যবস্থা করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মমতা পৌঁছতেই তৃণমূলের মঞ্চ খোলা বন্ধ করল সেনা! তোপ দেগেও দিদি বদলে দিলেন ভাষামঞ্চের স্থান
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেনার পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশে সেনা এই পদক্ষেপ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রায় ২০০ সেনা আমাকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিল। আমি বললাম, পালাচ্ছেন কেন? আমি আপনাদের বিরুদ্ধে নই, আপনাদের জন্য গর্বিত। এটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আর বিজেপির কাজ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৃণমূলের মঞ্চ ভাঙা হচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে কেউ ছেলেখেলা করলে চুপ করে বসে থাকবে না বাংলা।”
ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল কংগ্রেস বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাষা আন্দোলনের নামে ধর্না চালিয়ে আসছে। শনিবার-রবিবার সভা হলেও সারা সপ্তাহ মঞ্চ ও প্যান্ডেল দাঁড়িয়ে থাকছিল। সেনার দাবি, অনুমতি ছাড়াই অস্থায়ী মঞ্চকে স্থায়ী ধর্নাস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সেনার অনুমতি নিয়েই মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। আপত্তি থাকলে সরাসরি সরকারকে জানানো যেত। “কলকাতা পুলিশকে বলতে পারত, অরূপ বিশ্বাসকে জানাতে পারত। আমরা নিজেরাই খুলে দিতাম। তা না করে হঠাৎ মঞ্চ ভাঙা হল—এটা অনৈতিক,” অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।
আরও পড়ুনঃ লাল পতাকার রাষ্ট্রীয় গাড়ি! কমিউনিস্ট নেতাদের জন্য তৈরি গাড়িতে চড়লেন মোদী
মুখ্যমন্ত্রীর এ কথার পরই সেনা বিবৃতি দিয়ে বলে, কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়নি এ কথা ঠিক নয়। প্যান্ডেল সরাতে বলার আগে কলকাতা পুলিশকে এটা জানানো হয়েছিল।
তবে মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর অভিযোগ রাশি থেকে সরতে রাজি নন। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, সেনাকে বিজেপি ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু শেষমেশ ওরাও ছাড়ল না।”
ঘটনার পিছনে বিজেপির ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, “এভাবে ভাষা আন্দোলন থামানো যাবে না। আমরা আরও বড় আকারে আন্দোলন করব। যত অত্যাচার হবে, বিজেপি ততই দেশ থেকে মুছে যাবে।”



