সন্তান হচ্ছে না। অতএব সমস্যা রয়েছে মেয়েটিরই। কোনও রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার আগেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। অথচ বন্ধ্যত্বও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এতে ভুগছেন অগণিত পুরুষ। এ ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার দায় অনেকটাই। চর্বিজাতীয় বা মশলাযুক্ত খাবার, বিভিন্ন নেশা, রাতের শিফটে কাজ এবং অতিরিক্ত মানসিক সমস্যা তৈরি করছে বন্ধ্যত্ব। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমান কমে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ হল ডেস্কে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ ও আমেরিকার হার্ভার্ড স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষণায় তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাড়বে লাফিয়ে…! পুরুষরা চিবিয়ে খান মাত্র ১০ দিন
নতুন গবেষণা অনুসারে, পুরুষদের দীর্ঘ ক্ষণ ডেস্কে বসে কাজ করা এবং কম শারীরিক কার্যকলাপ বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন ধরা যাক, যিনি, টানা ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বসে রয়েছেন, তাঁর শরীরে তাপমাত্রার বদল হবে। বিশেষ করে শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি কম থাকে। এবং সেটা থাকাই বাঞ্ছনীয়। তা হলেই শুক্রাণুর উৎপাদন স্বাভাবিক ভাবে হবে। শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা যদি বৃদ্ধি পায়, তা হলে শুক্রাণুর উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।
আবার যিনি বাড়িতে বসে কাজ করছেন এবং কোলে ল্যাপটপ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন, তাঁর ক্ষেত্রে বিপদ আরও বেশি। ল্যাপটপ থেকে বেরোনো তাপ শুক্রাশয়ের তাপমাত্রার হেরফের যেমন ঘটাবে, তেমনই তার ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাবে। এতে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান কমবে। ল্যাপটপ থেকে যে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত হয়, তা যদি দিনের পর দিন সরাসরি ধাক্কা দেয়, তা হলে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
একে তো একই জায়গায় বসে কাজ, তার উপর খুব আঁটসাঁট পোশাক বা অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরলে শুক্রাশয়ের কোষের ক্ষতি হবে। এতে শুক্রাণুর উৎপাদন কমবে।
রাতের শিফটে অনেককেই কাজ করতে হয়। বিশেষ করে মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তিকর্মীদের রাতভর জেগে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে রাতের শিফটে যদি একটানা বসে থাকেন অথবা খুব বেশি পরিমাণে চা-কফি বা জ়াঙ্ক ফুড খান, তা হলে হরমোনের ভরাসাম্য নষ্ট হবে। ফলে শুক্রাণুর উৎপাদন কমবে। আবার দীর্ঘ ক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকার কারণে পেলভিক অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুনঃ চাঁদ উঠেছিল গগনে! দম্পতির প্রথম ভ্রমণ মধুচন্দ্রিমা, মধু-চাঁদে কীভাবে মিলেমিশে গেল সম্পর্কের রসায়ন?
বসে কাজের আরও একটি সমস্যা হল ওজন বৃদ্ধি। ভুঁড়ির আকার যত বাড়বে, ততই বিপাকক্রিয়ার হার কমবে। প্রদাহ বাড়বে। অতিরিক্ত প্রদাহ শুক্রাশয়ের জন্য মোটেই ভাল নয়।
গবেষকেরা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি প্রায় ১২০০ পুরুষের শুক্রাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় কোলে ল্যাপটপ রাখেন অথবা একই জায়গায় টানা বসে কাজ করেন, তাঁদের শুক্রাণুর উৎপাদন প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।
১) একটানা বসে কাজ নয়। প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট অন্তর উঠে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। স্ট্রেচিং করে নিতে পারলে খুব ভাল হয়।
২) সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০-৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করতে হবে। হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো, দৌড়োনো, সাঁতার— যে কোনও রকম ব্যায়াম করলে সুস্থ থাকবেন।
৩) রাতের শিফটে কাজ করলে চা-কফির মাত্রা কমাতে হবে। খিদে পেলে ড্রাই ফ্রুট্স রাখুন হাতের কাছে। পর্যাপ্ত জল পান করাও জরুরি।
৪) অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান শুক্রাণুর মান ও গতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলে। কাজেই, নেশার মাত্রা কমাতে হবে।
৫) প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাকসব্জি, ফল খেতে হবে। জ়িঙ্ক ও সেলেনিয়াম আছে এমন খাবার যেমন ডিম, বাদাম ও নানা রকম বীজ রাখতে হবে ডায়েটে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।



