Thursday, 26 June, 2025
26 June, 2025
Homeরাজ্যMadhyamik: CBSE-র মতো এবার কি মাধ্যমিকেও বছরে ২ বার পরীক্ষা?

Madhyamik: CBSE-র মতো এবার কি মাধ্যমিকেও বছরে ২ বার পরীক্ষা?

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। দুরুদুরু বুকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

একবার নয়। ২০২৬ সাল থেকে সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা বছরে ২ বার পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাচ্ছে। প্রথমবার খারাপ ফল করলে কিংবা ফলাফল মনের মতো না হলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। ফলে প্রথমবার একাধিক বিষয়ে ফেল করা পরীক্ষার্থী ফের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে তাদের কোনও শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সিবিএসই-র এই সিদ্ধান্তের পর কী ভাবছে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ? সিবিএসই-র পথ অনুসরণ করে মধ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদও এবার বছরে ২ বার পরীক্ষা নেবে? এই পদ্ধতি কার্যকর করতে গেলে কী কী ব্যবস্থা দরকার?

সিবিএসই জানিয়েছে, পরের বছর থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা ২ বার পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে। প্রথম পরীক্ষা আবশ্যিক। দ্বিতীয় পরীক্ষা ঐচ্ছিক। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর দ্বিতীয় পরীক্ষা হবে মে মাসে। দ্বিতীয় পরীক্ষায় একজন পড়ুয়া সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। দুটি পরীক্ষার মধ্যে পড়ুয়া যে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাবে, সেটাই গণ্য হবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষাটিকে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টায় নদীতে তলিয়ে মৃত্যু ৪ জনের; উত্তাল দ্বারকেশ্বর

দশম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে সিবিএসই-র সিদ্ধান্তর পর শিক্ষামহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। সিবিএসই-র এই সিদ্ধান্ত কী বাকি বোর্ডগুলিও চালু করবে? CISCE-র দশম শ্রেণি (ICSE) ও দ্বাদশ শ্রেণিতে (ISC) ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা রয়েছেই। তবে তা সর্বোচ্চ দুটি বিষয়ে। মূল পরীক্ষার পর ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা হয় জুলাই মাস। ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা তিনটি বিষয়ে করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

কী ভাবছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর?

সিবিএসই তাদের দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের বছরে ২ বার পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিলেও রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এখনই এই নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। রাজ‍্য চলবে নিজের নিয়মেই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিকে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা চালু নিয়ে এখনই কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। বছরে একটাই পরীক্ষা হবে। রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের চাপ কমাতে সেমেস্টার পদ্ধতি রয়েছেই। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে বছরে ৪ বার পরীক্ষা হয়।

সিবিএসই-র মতো বছরে ২ বার পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের বোর্ডের কোথায় অসুবিধা?

সিবিএসই-র দশমের মতো রাজ্যের বোর্ডের ক্ষেত্রে বছরে ২ বার পরীক্ষা নিতে গেলে কোথায় অসুবিধা হবে তা ব্যাখ্যা করলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সিবিএসই কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বভারতীয় বোর্ড। প্রত্যেক রাজ্যে যদি দেখা যায়, ওই বোর্ডের অধীনে পড়ুয়া সংখ্যা খুব বেশি নয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিকে সাড়ে আট থেকে নয় লক্ষ, কখনও ১০ লক্ষ পড়ুয়া থাকে। আমাদের উচ্চমাধ্য়মিকে সাত থেকে সাড়ে সাত লক্ষ, কখনও আট লক্ষ পড়ুয়া থাকে। সাধারণত মার্চে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা হয়। মে মাসে ফল প্রকাশ করা হয়। তারপর কেউ ফেল করলে কিংবা নম্বর মনঃপুত না হলে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার জন্য একটা সময় দিতে হবে। নতুন করে এনরোলমেন্ট করতে হবে। মে মাসে ফল প্রকাশ হলে জুন মাসের আগে ফর্ম জমা সম্ভব নয়। জুলাইয়ে পরীক্ষা হবে। অগস্টের আগে ফল বের করা সম্ভব নয়। আমাদের যদি ৬৫টা বিষয় থাকে, সবগুলিরই পরীক্ষা নিতে হবে। মাধ্যমিকে সেটা সাতটা বিষয়। রাজ্যজুড়ে পরীক্ষা হবে। যেটা আর একটা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজনের সমান।”

আরও পড়ুন: সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে গেল! ভয়াবহ ঘটনা বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা নেওয়া কার্যত অসম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, “হোম ভেন্যুতে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। সেন্টার ভ্যেনু কনসেপ্টে পরীক্ষা নিতে হবে। এগুলো বজায় রেখে এই ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা নেওয়া বাস্তবসম্মত নয়।”

রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিকের পড়ুয়াদের চাপ কমাতে যে ব্যবস্থা রয়েছে, সেকথা জানিয়ে চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “উচ্চমাধ্যমিকে আমরা এখন বছরে দুটো পরীক্ষা নিচ্ছি। তৃতীয় সেমেস্টারে সাপ্লিমেন্টারি হয়। এর সঙ্গে পুরনো পরীক্ষা ব্যবস্থাও আরও ৪ বছর চলবে। ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা মূলত নেওয়া হচ্ছে যাতে পড়ুয়াদের কোনও শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না হয়। আমাদের চতুর্থ সেমেস্টারেও সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা রয়েছে। তবে তাতে পড়ুয়াদের একটা শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয়। তারা পরের বছর পরীক্ষা দিতে পারে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার আগে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”

ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা পদ্ধতির অবশ্য প্রশংসা করলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি। তিনি বলেন, “ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার কনসেপ্টটা শুনতে ভাল। একজন ছাত্রের কোনও কারণে একটা পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। সেটাকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। আমরাও সেজন্য সেমেস্টার পদ্ধতি চালু করেছি। যাতে ছাত্রদের চাপ কমে। একটা সেমেস্টারে খারাপ পরীক্ষা দিলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকছে। সিবিএসই-র এটা সাহসী সিদ্ধান্ত। দেখা যাক তারা এটাকে কীভাবে বাস্তবায়িত করে।” ওপেন বোর্ডে অনলাইনে যারা পরীক্ষা নেয়, তাদের পক্ষে এই পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব জানিয়ে চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “বেশ কয়েকটি অনলাইনে ওপেন বোর্ডে এই ব্যবস্থা রয়েছে। ওপেন বোর্ডে অনলাইনে বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেওয়া হয়। সেখানে অফলাইন ব্যবস্থায় এভাবে পরীক্ষা নেওয়া কার্যত অসম্ভব।”

কী বলছেন শিক্ষকরা?

সিবিএসই-র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিনব ভারতী হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল শ্রাবণী সামন্ত বলেন, “যখন কোনও নতুন জিনিস শুরু হয়, তখন নানা মত উঠে আসে। তবে আমার মনে হয়, এটা নতুন খুব একটা নয়। এখন ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা রয়েছে। এই বছর যা জুলাইয়ে হবে। শুধু পরিবর্তন বলতে ইমপ্রুভমেন্টটা তৎক্ষণাৎ হয়ে যাবে। পড়ুয়ারা ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার জন্য যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেটাই আরও ভাল করে মে মাসে দিতে পারবে। আর একটা পরিবর্তন হচ্ছে, এখন ক্লাস টেনের পড়ুয়ারা (ICSE) ২টি বিষয়ে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিতে পারে। নতুন সার্কুলারে তিনটে বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে।”

এই নতুন পদ্ধতিতে অনেক পড়ুয়ার সুবিধা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক সময় অনেক পড়ুয়া শেষের দিকে পড়াশোনা শুরু করে। ফলে ৫টি বিষয়ে তাদের পক্ষে তখন মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এবার তারা হয়তো প্রথমে তিনটে বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ে পরীক্ষা দিল। পরে ২টো বিষয় পড়ল। এতে চাপ কম হতে পারে।” তবে ক্লাস টুয়েলেভের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি লাগু করা কিছুটা কঠিন বলে তিনি মনে করেন। তাঁর বক্তব্য, “ক্লাস টুয়েলভের পর উচ্চশিক্ষাস্তরে প্রবেশ করবে পড়ুয়ারা। ফলে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে ক্লাস টুয়েলভের ক্ষেত্রে এইভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।”

একজন পড়ুয়ার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। পড়ুয়ারা বছরে একবারই সুযোগ পায়, সেই পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য। সেখানে সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা আগামী বছর থেকে ২ বার সুযোগ পাবে। রাজ্যের শিক্ষা দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা এখনই সিবিএসই-র পথে হাঁটছে না। অনেকে বলছেন, রাজ্যের বোর্ডের পড়ুয়া সংখ্যা দিন দিন কমছে। এই পরিস্থিতিতে সিবিএসই-র নতুন সিদ্ধান্ত অনেক অভিভাবককে তাঁদের সন্তানকে কেন্দ্রীয় এই বোর্ডে পড়াতে উৎসাহিত করবে না তো?

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন