কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
সকালে ঝকঝকে নীল আকাশ। বেলার এগারোটার মধ্যেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল চারদিক। উত্তর সিকিমে আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালি আচরণে বৃহস্পতিবারও ছাতেনে আটকে পড়া সমস্ত পর্যটককে ফেরানো সম্ভব হল না।
এ দিন সকালে দু’টি হেলিকপ্টারে মোট ৫৯ জন পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আসা হয় পাকিয়ং বিমান বন্দরে। একটি হেলিকপ্টারে ২০ জন এবং অন্যটিকে ৩৯ জন পর্যটককে আনা হয়।
আরও পড়ুন: ক্যানেল মেরামতিতেও কাটমানি! কড়া হুঁশিয়ারি সেচমন্ত্রীর
সেখান থেকে বাসে করে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে নিয়ে যাওয়া হয়। সামান্য কিছু পর্যটক অবশ্য পাকিয়ং থেকেই অন্য একটি হেলিকপ্টারে চড়ে সোজা বাগডোগরায় চলে যান। তবে ছাতেনে এখনও আটকে রয়েছেন আরও ৬৩ জন পর্যটক।
মঙ্গনের পুলিশ সুপার সোনম ভুটিয়া বলেন, ‘এ দিন সমস্ত পর্যটককেই ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় ৬৩ জন এখনও আটকে রয়েছেন। শুক্রবার সকালেই তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।’
উত্তর সিকিমে এমন প্রতিকূল আবহাওয়া গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। অতি বৃষ্টির জেরে ধসে রাস্তা বেহাল হয়ে পড়লেও হেলিকপ্টারে পর্যটকদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ বার প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ছে। বৃষ্টিভরা মেঘ এবং কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চরাচর।
আরও পড়ুন: বাংলার ঘরে ঘরে জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ পৌঁছবে রথের আগেই
অন্যদিকে, ধসের জেরে ছাতেন থেকে চুংথাংয়ে পর্যটকদের হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধসের জেরে রাস্তা ভেঙেছে। তার চেয়েও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন নতুন ঝর্নার সৃষ্টি। তীব্র গতিতে ঝর্নার জল রাস্তায় এসে আছড়ে পড়ছে।
ফলে ওই এলাকাগুলি অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিকিম পুলিশের পক্ষ থেকে মঙ্গন থেকে লাচেন পর্যন্ত হেলিকপ্টারে তিস্তা নদী ও রাস্তার ভিডিয়ো তৈরি করা হয়। ওই ছবি দেখে আধিকারিকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
যে ভাবে রাস্তায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাতে মেরামত করতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। রাস্তার পাশাপাশি বেশ কিছু পাহাড়ি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সমস্ত এলাকায় খাবারের সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু হেলিকপ্টারে ত্রাণ পৌঁছনও কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেনাদের পক্ষ থেকে অবশ্য জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। হেঁটে পাহাড়ি রাস্তা ডিঙিয়ে ত্রাণ পৌঁছন সম্ভব কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মধ্যেও আশার আলো প্রশাসন এবং স্থানীয় চালক ও হোটেল মালিকদের ভূমিকা। তাঁরা পর্যটকদের ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’