মঙ্গলবার খবর পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ঘটতে পারে সেনা অভ্যুত্থান। যদিও পরে এই খবর নেহাতই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তার একদিন পরই ভারতের আরও এক প্রতিবেশি দেশে সেনার অন্দরেই বিদ্রোহের আঁচ পাওয়া গেল। সিএনএন-নিউজ১৮-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকাশ্যেই সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসাররা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেল মুনিরকে একটি কড়া চিঠি দিয়েছেন জুনিয়র অফিসাররা। এই চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, পাক সেনাকে রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন জেনারেল মুনির। জুনিয়র অফিসারদের হুঁশিয়ারি, তাঁকে হয় অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে এর ফল ভুগতে হবে। কর্নেল, মেজর, ক্যাপ্টেন ব়্যাঙ্কের অফিসাররা এবং এমনকী জওয়ানরাও স্বাক্ষর করেছেন এই চিঠিতে।
জেনারেল মুনিরের নেতৃত্বকে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের নেতৃত্বের ভুলে পাকিস্তানকে লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। জেনারেল মুনিরের সময় পাকিস্তান আবার সেই পথে হাঁটছে। চিঠিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘পদত্যাগ করুন অথবা এর ফল ভোগ করুন। এটা কোনও আবেদন নয়। এটি কোনও আপোসের বিষয় নয়।’
জেনারেল মুনিরের নেতৃত্বকে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের নেতৃত্বের ভুলে পাকিস্তানকে লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। জেনারেল মুনিরের সময় পাকিস্তান আবার সেই পথে হাঁটছে। চিঠিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘পদত্যাগ করুন অথবা এর ফল ভোগ করুন। এটা কোনও আবেদন নয়। এটি কোনও আপোসের বিষয় নয়।’
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভিন্নমত পোষণকারীদের নৃশংস ভাবে দমন-পীড়ন করা হয়েছে। গৃহবধূকে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের গুলি করে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের কারাগারে অত্যাচার করা হয়েছে। অধিকারকর্মীরা কথা বলার সাহস করলে তাদের গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেলেঘাটার বরফকলের কাছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে একাধিক দমকলের ইঞ্জিন
নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দেশের অর্থনীতিকে তলিয়ে যেতে দিয়েছেন জেনারেল মুনির, এমন অভিযোগও করেছেন জুনিয়র অফিসাররা। তাঁরা বলেছেন, ‘অর্থনীতির লাশ পড়ে আছে… তবুও আপনি একজন টিনের তৈরি স্বৈরশাসকের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা অনাহারে আছি। আর আপনি আপনার মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিচ্ছেন। জনরোষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকী শিশুরাও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছে। চেকপয়েন্টে শিশুরা আমাদের পাথর ছুড়ে মারছে। নিজেদের দেশেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আপনি অপ্রীতিকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘কর্নেল, মেজর, ক্যাপ্টেন এবং জওয়ান…, এটা পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর কণ্ঠস্বর। আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠান, আমাদের দেশ এবং আমাদের সম্মানকে নর্দমায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনার সময় শেষ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদত্যাগ করুন, নইলে আমরা আপনার চুরি করা জিনিসপত্র ফিরিয়ে নেব…, প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করব।’ জুনিয়র অফিসারদের দাবি, জেনারেল মুনিরকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় পাক সেনার নেতৃত্ব বর্তমানে সিনিয়র অফিসারদের একটি কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করা হোক।
আরও পড়ুন: বিধানসভা অধিবেশন বয়কট, আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ বামেদের
সম্প্রতি বালোচিস্তানে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি হাইজ্যাক করেছিল জাফর এক্সপ্রেস। এই হাইজ্যাকিংয়ের ঘটনাকে চিঠিতে পাক সেনাবাহিনীর লজ্জার মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আমরা সে দিন বালোচিস্তান হারিয়েছি। আমরা আমাদের মর্যাদা হারিয়েছি।’ অর্থনৈতিক পতন এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের জেরে বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ক্রমে অস্থিরতা বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই দেশের শাসন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু কখনও এই ধরনের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। জেনারেল মুনিরের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় জেনারেল মুনির কি সতর্কবার্তা কানে নিয়ে সরে যাবেন? নাকি পাক সেনাবাহিনীতে দেখা যাবে অভূতপূর্ব ভাঙন?