Tuesday, 19 August, 2025
19 August, 25
Homeআন্তর্জাতিক নিউজKabul: জলশূন্য হয়ে যেতে পারে কাবুল! মুক্তির উপায় খুঁজছে তালিবান সরকার

Kabul: জলশূন্য হয়ে যেতে পারে কাবুল! মুক্তির উপায় খুঁজছে তালিবান সরকার

গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে জলসঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে আফগানিস্তানের রাজধানীতে।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

শহরের অদূরেই তুষারাবৃত পাহাড়। আশপাশ দিয়ে তিনটি নদীও বয়ে গিয়েছে। সেই কাবুলে জলের অভাব হওয়ার কথা নয়। এমন কথা অতীতে শোনাও যায়নি। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে জলসঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে আফগানিস্তানের রাজধানীতে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জলশূন্য হয়ে যেতে পারে কাবুল। শহরের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের কাছে কোনও জল থাকবে না! মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই আশঙ্কা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বাংলায় নতুন আতঙ্কের নাম লেপ্টোস্পাইরা! চিকিৎসকদেরও চোখ কপালে

দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে কাবুল। ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার ক্রমশ খালি হচ্ছে। পাহাড়ের বরফ গলে যাওয়া, কম বৃষ্টিপাত এবং কুয়ো থেকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে জল তোলার ফলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপরে গত ২৫ বছরে কাবুলের জনসংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরবাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কলকারখানা বেড়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জল ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনও টেকসই পদক্ষেপ করা হয়নি। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ জানাচ্ছে, কাবুলে জলের ঘড়া যে গতিতে ভরছে, তার দ্বিগুণ গতিতে খালি হয়ে যাচ্ছে। এক অলাভজনক সংস্থা ‘মার্সি কর্পস’ সম্প্রতি জানিয়েছে, কাবুলই হল বর্তমান যুগের প্রথম কোনও রাজধানী শহর, যেখানে ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যেতে বসেছে। অর্থাভাবে ভুগতে থাকা তালিবান সরকার এখনও পর্যন্ত নিকটবর্তী নদী বা বাঁধগুলি থেকে জল শহরে নিয়ে আসতে পারেনি। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

আফগানিস্তানের রাজধানীর পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে শহরবাসীদের মধ্যে প্রায়শই জল নিয়ে বচসা বেধে যায়। কাবুলের বাসিন্দা, পেশায় দর্জি আমান করিমির সঙ্গেও সম্প্রতি এক মহিলার এমন বাগ্‌বিতণ্ডা বেধে গিয়েছিল। মহিলা স্থানীয় এক মসজিদের কলে জল ভরতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল চারটি ড্রাম। আর তা দেখেই চটে যান করিমি। “অনেক নিয়েছেন, এ বার আমার পালা!” এই বলে মহিলাকে প্রায় জলের লাইন থেকে সরিয়েই দিয়েছিলেন। এটি কাবুলে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জল নিয়ে প্রায়ই এমন তর্কাতর্কি লেগে থাকে প্রতিবেশীদের মধ্যে। করিমি নিজেও তা মানছেন। তাঁর কথায়, “জল এখন আমাদের কাছে সোনার চেয়ে কম কিছু নয়।”

আরও পড়ুনঃ স্বাধীনতা দিবসের দিন দুমড়ে-মুচড়ে গেল বাস, বর্ধমানে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত ১০

করিমি ওই মসজিদের কল থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ লিটার জল ভরে বাড়িতে নিয়ে যান। সাধারণত গৃহস্থের বাড়ির বালতিগুলিতে ৫-১০ লিটার জল ধরে। ওই জল দিয়েই রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, স্নান-সহ পরিবারের সব কাজ করতে হয় তাঁদের। পানীয় জলও এর ১৫০ লিটারের মধ্যেই। শুধু কাবুল নয়, গোটা আফগানিস্তান জুড়েই জলসমস্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুসারে, খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কারণে প্রতি বছর প্রায় ৭ লক্ষ আফগান নাগরিক ঘরছাড়া হন। আফগানিস্তানের ৪ কোটি ২০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশই বিশুদ্ধ পানীয় জল পান না।

অতীতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিলেন। পাইপ লাইনের মাধ্যমে কাবুলের বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু তার বেশির ভাগেরই কাজ শেষ হয়নি। আবার তালিবান সরকারকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করলে ২০২১ সালের পরে অনেক সংস্থা হঠাৎ করেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়। জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ নাজিবুল্লাহ সাদিদের কথায়, “কাবুলে প্রায় দুই দশক ধরে জলসমস্যা চলছে। কিন্তু এটিকে কোনও দিনই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন কূপগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে।”

কাবুলে বর্তমানে কিছু সংস্থা বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ করে। তবে যাঁরা সেই জল কিনতে পারেন না, তাঁদের নির্ভর করতে হয় মসজিদের কল বা কোনও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের উপর। কাজ থেকে ফিরে বিকেলের দিকে তাঁরা সবাই করিমির মতো ঠেলাগাড়িতে জলের ড্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ড্রামে জল ভরে বাড়ি নিয়ে যান। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ জানাচ্ছে, এই সমস্যা দূর করার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে তালিবান সরকার। ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত গোটা আফগানিস্তানে মাত্র চারটি বাঁধ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি রয়েছে কাবুল থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে। ওই বাঁধের সঙ্গে পাইপ লাইনের মাধ্যমে কাবুলকে যুক্ত করা গেলে হাজার হাজার পরিবারের কাছে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু সেই কাজ এখনও হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া পঞ্জশির উপত্যকার কাছেও একটি পাইপলাইনের কাজ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সেটিতে এখনও তালিবান সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি।

আফগানিস্তানের জল এবং জ্বালানি মন্ত্রকের মুখপাত্র মতিউল্লা আবিদ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাদের সব প্রকল্পই অনেক খরচসাপেক্ষ। তালিবান সরকার বর্তমানে সেগুলির জন্য খুব বেশি হলে অর্ধেক অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ অনুসারে, সে দেশে জলসঙ্কট মোকাবিলায় মূলত দু’টি প্রতিকূলতা রয়েছে। প্রথমত, বিদেশি বিনিয়োগ হাত গুটিয়ে নিয়েছে। যার ফলে বেশির ভাগ কল এখন বন্ধ। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। এই দুই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছে কাবুল।

 

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন