শহরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ আটকাতে তৎপর কলকাতা পুরসভা (Kolkata Corporation)। চলতি মাসের শুরুতে নবান্নে মুখ্যসচিবের পৌরহিত্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানে শহরের পরিচ্ছন্নতা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, দুই ভাগে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সর্বস্তরের আধিকারিকদের। প্রতিটি পুরসভা, পঞ্চায়েত এলাকা ধরে ধরে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলিকে।
অতীতের উদাহরণ থেকে যে এলাকাগুলিতে বেশি সংখ্যা ডেঙ্গি পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে বাড়তি জোরও দিতে বলা হয় নবান্নের সেই বৈঠকে। সেই মতোই কাজ শুরু করে দিল কলকাতা পুরসভা। তথ্য খতিয়ে দেখে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ কলকাতা পুরসভার ৬৮টি ওয়ার্ডকে ‘বিপজ্জনক’ ওয়ার্ড হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
কোন কোন ওয়ার্ড রয়েছে তালিকায়?
২, ৪, ১৪, ২৬, ৭, ৩১, ৩৩, ৩৬, ৪৮, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬১, ৬২, ৬৫, ৬৯, ৭৭, ৭৯, ৮১, ৮২, ৮৫, ৮৬, ৮৮, ১০৩, ১০৫, ১১০, ১১২, ১১৫, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৪, ১২৬, ১২৭, ১২৯, ১৩১, ১৪৪।
সোমবার অতীন ঘোষ বলেন, “আজ থেকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কলকাতা পুরসভার কর্মসূচি ঘোষণা করা হল। ২০২৩ সালের তুলনায় ‘২৪-এ ডেঙ্গি বেড়েছে গোটা বিশ্বে। চিন, অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাসেমেন্টে ভারতের অবস্থাও খুবই খারাপ। কারণ ডেঙ্গি চিহ্নিতকরণ বেসরকারি সংস্থায় হয়। কলকাতা ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মর্নিং ডাটা কালেক্টর আমরা প্রথম শুরু করেছি। যারা শুধু সকালে ডাটা কালেকশন করে অনলাইনে রেকর্ড দেয়।”
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর হাতে আঁচড়! শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
তিনি বলেন, “এই রেকর্ড থেকে মানুষ জানতে পারে কোন ওয়ার্ডের কোথায় কতজন ডেঙ্গি আক্রান্ত। আগে ১৩৯২৬ জন আক্রান্ত ছিল। তার আগের বছর প্রায় ৯০% ডেঙ্গি কম হয়েছে। কলকাতা আর্থসামাজিক পরিবেশে সংখ্যাটা যে কোনও সময় বাড়তে পরে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”
পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০২৪ সালে ৬৮টি ওয়ার্ডে ১ থেকে ১০ জনের ডেঙ্গি হয়েছে। রোগ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে। ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। অ্যাসেসমেন্ট কালেকশন বিভাগ থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে। ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকেও যুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের স্টিকারে রাস্তায় দাপাচ্ছে ‘নিষিদ্ধ’ টোটো, ‘ছুঁতে পারছে না পুলিশ’
বলা হয়েছে ২৬ মার্চ থেকে হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মিটিং শুরু হবে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কোথায় পরিত্যক্ত কারখানা রয়েছে সেটা খুঁটিয়ে দেখা হবে। অ্যাসেসমেন্ট করে যেখানে অপরিষ্কার বা অপরিচ্ছন্নতা রয়েছে, সেখান থেকে ৩৯ লক্ষ টাকা আদায় করেছে পুরসভা।
এছাড়াও প্রচারকর্মীদের নিয়ে হ্যান্ড মাইকে শনিবার ও বুধবার প্রচার করা হয় কলকাতা পুরসভার তরফে। যাতে মানুষকে সচেতন হয়। জুন মাসের মধ্যে সমস্ত অপরিষ্কার অঞ্চল পরিষ্কার করার সময় বেঁধে নিয়েছে পুরসভা।
অতীন ঘোষ আরও জানান, “আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ড ধরে জায়গা চিহ্নিত করে ৪৯৬ ধারায় নোটিস টাঙিয়েছি। ৪৯৯ ও করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশনে ৩২টি মোবাইল টিম কাজ করে। ১৪৪টি ভেক্টর কন্ট্রোল টিম রাখা হয়েছে।
মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য ও ডেপুটি মেয়র বলেন, “৪৫৫, ৪৫৬ ধারায় আমাদের কাছে অধিকার আছে যদি কোনও বাড়ি বন্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির তালা ভেঙে পরিষ্কার করা কাজ করতে পারব। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় পুলিশ কাজ করে না। তাই পুলিশ কমিশনারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৪৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে। যার মধ্যে এই বছরই রয়েছে ৩টি।”