৭ বছরের বিরতির পর অবশেষে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সম্পত্তির সার্কেল রেট বৃদ্ধি করল রাজ্য সরকার। এর ফলে এখন থেকে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে গেলে ক্রেতাদের স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ বেশি টাকা গুণতে হবে।
সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এলাকা ভিত্তিতে এই বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। বুধবার থেকে নতুন হার কার্যকর হয়েছে। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, অন্যদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের ওপরই বাড়তি চাপ পড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ কাশী বোস লেন দুর্গা পূজাতো দেখবই, কিন্তু বাকি পুজো! প্ল্যান আজ থেকেই
সার্কেল রেট হল সরকারের নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্য, যার ভিত্তিতে কোনও সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য করা হয়। নবান্নের কর্তাদের মতে, বাজারে সম্পত্তির দাম অনেক বেড়ে গেলেও দীর্ঘদিন সার্কেল রেট অপরিবর্তিত ছিল। ফলে বাজারমূল্য ও সরকারি নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে বড় ফাঁক তৈরি হয়েছিল। সেই ফাঁকটাই বোজানোর চেষ্টা হল।
- সল্ট লেক সংলগ্ন মাহিষবথান এলাকায় সার্কেল রেট এক ধাক্কায় প্রায় ৮৭% বেড়ে হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ১২,০৬৫ টাকা।
বরানগরের বি.টি রোড এলাকায় আগে প্রতি বর্গফুটে সার্কেল রেট ছিল ৪,৭০৮ টাকা। নতুন রেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮,৮৫০ টাকা—অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। - টলিগঞ্জসহ একাধিক এলাকায় নতুন হারে সার্কেল রেট প্রতি বর্গফুটে ৮২৫০ থেকে বেড়ে ১০,২১২ টাকা করা হয়েছে।
বেহালা বড়িশা এলাকায় সার্কেল রেট ৪২৯২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ৭০৯৫ টাকা। - সোনারপুর এলাকায় সার্কেল রেট ৩৪১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬২৩৭ টাকা। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
- নিউটাউনে ৩৫৩৫ টাকা থেকে বেড়ে সার্কেল রেট হয়েছে প্রতি বর্গফুট পিছু ৬২০৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি বৃদ্ধি হয়েছে।
- তপসিয়া এলাকায় সার্কেল রেট ছিল প্রতি বর্গফুটে ৫৮৮১ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৯৮৫২ টাকা।
এইভাবে একাধিক এলাকায় সার্কেল রেট বাজারমূল্যের কাছাকাছি বা তারও ওপরে পৌঁছে গিয়েছে।
ঘটনা হল, সার্কেল রেট এভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে তিন বেডরুম ফ্ল্যাট ও কিছু দুই বেডরুম ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন মূল্য ১ কোটি টাকার বেশি দামের আওতায় চলে আসবে। তার ফলে স্ট্যাম্প ডিউটির ক্ষেত্রেও ধাক্কা রয়েছে। ১ কোটি টাকার নীচে স্ট্যাম্প ডিউটি ৬%, আর ১ কোটির বেশি হলে তা ৭%। ফলে অনেক ক্রেতাকেই অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। যদি সার্কেল রেট বাজারমূল্যের থেকেও বেশি হয়, তাহলে আয়কর আইনের নিয়মে বিক্রেতাকে সেই পার্থক্যকে “আয়” হিসেবে দেখিয়ে কর দিতে হবে। অর্থাৎ কোথাও ফ্ল্যাটের বাজার দাম ৬০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সার্কেট রেট অনুযায়ী দাম ১ কোটি টাকা। তা হলে বিক্রেতার পক্ষে তা ৬০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা মুশকিল। কারণ, তখন আয়কর দফতর বলতে পারে বাকি ৪০ লক্ষ টাকা আপনি নগদে নিয়েছেন। তার উপরেও কর দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ যাতায়াত যতবার খুশি; এই কার্ড হাতে থাকলে
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের অনেকে আশঙ্কা করছেন, এর ফলে অনেক ক্রেতা ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত আপাতত পিছিয়ে দিতে পারেন। যা সামগ্রিক ভাবে রিয়েল ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সরকার অবশ্য মনে করছে, এই সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে রাজস্ব অনেক বাড়বে। পাশাপাশি বাজারে সম্পত্তির লেনদেন আরও স্বচ্ছ হবে। সরকার স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে বেশি রাজস্ব পাবে, যা পরিকাঠামো উন্নয়ন, শহর পরিকল্পনা ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবায় কাজে লাগতে পারে।
আবার কিছু বিশেষজ্ঞও মনে করছেন, সার্কেল রেট ও বাজারমূল্যের ফাঁক কমিয়ে আনা হলে স্বচ্ছ আসবে, যেমন বিক্রেতা বা ক্রেতা এই ফাঁক কাজে লাগিয়ে কম মূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। তবে আগামী কয়েক মাসে লেনদেনের গতি কিছুটা হলেও কমতে পারে বলে তাঁদেরও আশঙ্কা রয়েছে