Tuesday, 14 October, 2025
14 October
Homeউত্তরবঙ্গDurga Puja 2025: কার্শিয়ংয়ের রাজরাজেশ্বরী! পাহাড়ে ১০৯ বছর ধরে বাঙালি ঐতিহ্যের দুর্গাপুজো

Durga Puja 2025: কার্শিয়ংয়ের রাজরাজেশ্বরী! পাহাড়ে ১০৯ বছর ধরে বাঙালি ঐতিহ্যের দুর্গাপুজো

ঐতিহ্যময় বাঙালি চিরাচরিত সর্বজনীন পুজোর স্বাদ পেতে হলে এই পুজো পর্যটকদের স্বাদ কানায় কানায় ভরে দেবে।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

অনেকেই এখন পাড়ি দিয়েছেন উত্তরবঙ্গে। পুজোয় এখন লম্বা ছুটি। দার্জিলিং কিংবা কালিম্পং এবং তার আশেপাশে তথাকথিত নাম না জানা নানা হট স্পট দিনকে দিন পর্যটকরদের হাতছানি দিলেও ছুটিছাটায় এখনও খুব একটা পিছিয়ে থাকে না একদা বাঙালির আর বাসস্থান হয়ে ওঠা কার্শিয়ং-ও। পুজোয় অনেকেই যেমন বেড়াতে যেতেই ভালবাসেন, কেউ কেউ আবার বেড়াতে গেলেও মন পড়ে থাকে নিজের পাড়ার বা এলাকার শারদোৎসবের দিকেই। এমন যাঁরা এই লেখা পড়ছেন, তাঁদের জন্য একটা সুখবর রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ প্রতীক্ষায় শুরু হবে দিন গোনা; ২০২৬ সালের দুর্গাপুজো কবে?

কার্শিয়ংয়ের পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে এদিক ওদিকে পানে চলতে গিয়ে ঢাকের আওয়াজ কানে এলে অবাক হবেন না এক্কেবারেই। আর যদি টুরিস্ট স্পটগুলো ঘোরার ফাঁকে একটু সময় বের করে নিতে পারেন, তাহলে একদল স্বজাতি আয়োজিত পুরোপুরি প্রথাগত বাঙালি পুজোর স্বাদ নিতে পারেন কনফেকশনারির স্লোগানটির মতো প্রাণ ভরে। এ বারেও কার্শিয়ংয়ের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েনের পুজো হচ্ছে শহরের চেয়ে সামান্য উপরে উঠেই একদা বাঙালিদের হাতেই গড়ে ওঠা রাজ রাজেশ্বরী হলে। এ বারে তাদের পুজোর ১০৯ বছর।

২০২৪ সালের মে মাসে নিছক দু’দিনের ছোট্ট সফরে যাওয়ার আগে শৈল শহরে বাঙালি সমাজের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল স্কুলের সহপাঠী শুভদীপ। তারপর খোঁজখবর করে জানা গেল বেঙ্গলি অ্যাসোসিসেয়শন তৈরির ইতিহাস, তার ধারাবাহিকতা। তবে এখন লোকবল ক্রমশ কমছে। কিন্তু সেই অসম লড়াই এখনও ছেড়ে দেননি চন্দন কর্মকার, সুজিত মুখোপাধ্যায়, শুভ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো সংগঠনের মাঝবয়সি ও প্রবীণ সদস্যরা। শহরে থাকলে সঙ্গত দেন নবীনেরাও। এই পুজোকেই নিজেদের পুজো হিসেবে তার সঙ্গে এখনও নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন অন্যতম বিখ্যাত দার্জিলিং চায়ের বাগান গিদ্দা পাহাড় টি এস্টেটের অন্যতম কর্ণধার হিমাংশু শাহ-সহ স্থানীয় আরও অনেকেই।

গোড়া থেকেই তাঁদের প্রতিমা ডাকের সাজের। পুজোর আয়োজন ও সজ্জা প্রথাগত। বস্তুত, ছবি বলছে, বেড়াতে গিয়েও থিমের পুজোর ভিড়ে ঐতিহ্যময় বাঙালি চিরাচরিত সর্বজনীন পুজোর স্বাদ পেতে হলে এই পুজো পর্যটকদের স্বাদ কানায় কানায় ভরে দেবে। বরং কিছুটা বাড়তি ছোঁয়া পেতে পারেন সেখানেকার বাঙালিদের আন্তকরিকতায়। আর রোজই রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান. যেমন উদ্যোক্তারা জানান, আগামী কাল, নবমীর সন্ধ্যায় হবে আরতি নাচের প্রতিযোগিতা। যে কেউ তাতে অংশ নিতে পারেন। পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও।

কার্শিয়ংয়ের সঙ্গে অনেক দিকপাল বাঙালি ও মণীষির স্মৃতি জড়িয়ে। তাই এই শৈল শহরটি বাঙালির খুব অজানা নয়। পাশাপাশি চাকরি, ব্যবসা কিংবা আইনজীবীর মতো অনেক পেশাদার বাঙালি প্রায় ১১৯ বছর আগে একে একে এসে বসত গড়েছিলেন ওই হোয়াইট অর্কিডের শহরে। তার প্রায় ন’বছর পরে এই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন গড় ওঠে। ১৯৩০ সাল থেকে রাজ রাজেশ্বরী হলে পুজো হয়েছে চলেছে। কার্শিয়ং (স্থানীয় উচ্চারণ অবশ্য খর্শং) স্টেশনের অদূরেই একটি ছোট্ট রেস্তরাঁয়, হোয়াইট অর্কিডে এখনও প্রায় রোজই সান্ধ্য আড্ডায় বসেন স্থানীয় বাঙালিদের কয়েকজন। পুজোর সময়ে সপরিবারে সেটিই যেন চলে আসে এই হলের পুজো প্রাঙ্গনে।

আরও পড়ুনঃ আজ নবমীতে বর্ষাসুর আপনার পাশে! সঙ্গে দশমী বা একাদশীতে জামা কাপড় পরে আসছে দূর্যোগাসুর

পুজোর আয়োজকেরা জানান, প্রতিমা আনা হয় শিলিগুড়ি থেকে। ১৯৫১ সাল থেকে একই পরিবারের ঢাকিরা আসেন মাসদহ থেকে। এখন তাঁজদের তৃতীয় প্রজন্মের কাঁধে এই গুরু দায়িত্ব। এই পুজোয় অবারিত দ্বার সকলের – স্থানীয় পাহাড়বাসী, পর্যটক, সকলেরই সাদর আমন্ত্রণ। আধুনিক সামাজিক মাধ্যমেও বার্তা ছড়ানো হয়। রোজই ভোগ হয়। অষ্টমীতে প্রায় ৫০০ জন ভোগ প্রসাদ পেয়েছেন। নবমীও সেই প্রসাদ। বস্তুত, হিমাংশুবাবু গেলবার আমায় এবং বিখ্যাত মকাইবাড়ি টি এস্টেটের প্রাক্তন কর্ণধার রাজা ব্যানার্জি পুজোর শতবর্ষের স্যুভেনিরে এই ভোগ প্রসাদের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছিলেন।

সুজিতবাবুদের যেমন একটি হোম স্টে রয়েছে। তাঁরা সেখানে আসা পর্যটকদের জানান পুজোর বিষয়ে। পর্যটকেরা থাকেন রাজ্য পর্যটন নিগমের একটি টুরিস্ট লজে। মঙ্গলবার ফোনে সেখানকার এক কর্মী জানালেন, সব ঘরেই পর্যটকেরা এসে গিয়েছেন। একটি ঘরও খালি নেই। তাঁরা সব পর্যটককেই রাজ রাজেশ্বরী হলের ওই পুজোর কথা জানান। যদি তাঁরা ইচ্ছে করেন, দেখতে যাওয়ার কথাও বলেন।

এক সময়ে রীতিমতো জাঁকজমক করে হত এই পুজো। ২০১৬ সালে পুজোর শতবর্ষে বিসজর্নের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জগদ্বিখ্যাত টয় ট্রেনে। নামমাত্র লোকবল নিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন পুরোদমে এখনও এটির আয়োজন করে চলেছেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখনও যথেষ্ট ঝলমলে এই শারদোৎসব। ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের পাহাড়েও পুজোর স্বাদ দেওয়ার আয়োজন তাঁরা বারবারের মতো সেরে রেখেছেন এ বারেও। শুধু অপেক্ষা পর্যটকদের।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন