এগারো সাল পর্যন্ত ছিল যুযুধান দুই পক্ষ। কিন্তু, এগারো সালে রাজ্যে পালাবদলের পরই কাছাকাছি আসে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল তারা। আর কয়েকমাস পর ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও কি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস আসন সমঝোতায় যাবে? জল্পনা যখন বাড়ছে, তখন বামফ্রন্টের বেশিরভাগ শরিক কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই ছাব্বিশের নির্বাচনে লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করল। মঙ্গলবার বামফ্রন্টের বৈঠকে সেই ছবিই ধরা পড়ল।
একুশের নির্বাচনে কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল বামফ্রন্ট। একটাও আসন পায়নি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেখানেও বামফ্রন্টের ফল শূন্য। এই পরিস্থিতিতে কয়েকমাস পর বিধানসভা নির্বাচনে কোন পথে যাওয়া উচিত, এই নিয়েই মঙ্গলবার আলোচনা হয় বামফ্রন্টের বৈঠকে।
আরও পড়ুনঃ ‘বিচারপতিরা চেম্বারেই বাতিল করেছেন, সেগুলি আদালতে আনার উপযুক্ত মনে করেননি’, বললেন শামিম
আর সেই বৈঠকে ছাব্বিশের ভোটে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই এগোনোর পক্ষে সওয়াল করল বাম শরিকরা। রাজ্যে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল। গতকাল বৈঠকে ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি দাবি করল, সাতাত্তর সালে তারা যেসব আসনে লড়েছিল, ছাব্বিশের নির্বাচনে সেই আসনগুলিতে লড়তে চায়। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আগ্রহী নয় ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি মিলে লড়াইয়ের পক্ষে তারা।
সিপিআই-র তরফে কংগ্রেস এলে ‘ওয়েলকাম’-র কথা বলা হয়েছে। যদিও তারা বেশি আসনের দাবি জানিয়েছে। বৈঠকে সিপিআই নেতৃত্ব বলেন, বামফ্রন্টে সিপিএমের পর দ্বিতীয় শক্তি তাঁরাই। বামফ্রন্ট গঠনের পরে আজও পর্যন্ত সাতাত্তর সালের হিসাবে কখনও আসন দেওয়া হয়নি। জোটে কংগ্রেস এলেও ছাব্বিশের ভোটে তাঁদের বেশি আসন দিতে হবে।
সিপিআইএমের তরফে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে কিংবা শরিকদের আসনের দাবি নিয়ে পাল্টা কোনও মন্তব্য এদিনের বৈঠক করা হয়নি। এদিনের বৈঠকে সিপিআইএমের তরফে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপির রাজ্য সম্পাদক তপন হোড়।
এদিনের বৈঠকে ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে লিখিত দাবি করা হয়েছে, সাতাত্তর সালে তারা মোট ৩৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। ছাব্বিশের ভোটে ওই সংখ্যক আসনে লড়ার সুযোগ দিতে হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে তারা নয়, তাও বৈঠকে বলেছেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। আরএসপি তাদের পুরনো ২৩টি আসন চেয়েছে।
আসন সমঝোতা নিয়ে আবারও আলোচনার প্রয়োজনের কথা বৈঠকের শেষ পর্যায়ে জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ফলে বামফ্রন্ট যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পথ এখনই বন্ধ করছে না, তা বিমান বসুর কথাতেই স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করলেও কয়েকদিন আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার মন্তব্য করেছিলেন, “আমাদের কর্মী-সমর্থকরা চাইছেন কংগ্রেস ২৯৪টি আসনে লড়ুক।” ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের আদৌ আসন সমঝোতা হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।