বনেদি বাড়ির পুজো দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ। হুগলি জেলা, যা একসময় বাংলার সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল, সেই প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারা আজও বহন করে চলেছে। আধুনিকতা ও বাণিজ্যিক পুজোর ভিড়ে এই বাড়িগুলোর পুজো আজও এক ভিন্ন মেজাজ ধরে রেখেছে। আগামী পুজোয় যাঁরা হুগলি জেলার এই ঐতিহ্য দেখতে চান, তাঁদের জন্য রইল কিছু সেরা বনেদি বাড়ির পুজোর তালিকা।
আরও পড়ুনঃ স্কুলে গার্ড নেই, মাসি নেই, নেই বাচ্চাদের নিরাপত্তা! কোচবিহার সদর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে এত সমস্যা!
১. শেওড়াফুলি রাজবাড়ি
হুগলি জেলার প্রাচীনতম রাজবাড়ি গুলোর মধ্যে অন্যতম হল শেওড়াফুলি রাজবাড়ি। এই বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় আড়াইশো বছরের পুরোনো। এখানে পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈদিক মতে। এখানকার প্রতিমা সম্পূর্ণ সাবেকি ধাঁচের, যেখানে মায়ের মূর্তি এবং তার সজ্জা আজও প্রাচীন নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়। এখানে প্রতিমার পাশে শিবকে দুর্গার সঙ্গী হিসেবে স্থাপন করা হয়, যা এক বিশেষ আকর্ষণ।
২. চন্দননগরের নন্দদুলাল মন্দির
চন্দননগরের এই মন্দিরটির পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। এই মন্দিরের প্রতিমার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য– এখানে দেবীর একটিমাত্র প্রতিমা দেখা যায়, যা নিত্য পূজা করা হয়। পুজোর সময় সেই প্রতিমাকেই নতুন করে সাজানো হয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছে বহু প্রাচীন লোকাচার এবং গল্প, যা পুজোর দিনগুলিতে এক বিশেষ পরিবেশ তৈরি করে।
৩. গুপ্তিপাড়ার সেন বাড়ি
গুপ্তিপাড়ার সেন বাড়ির পুজো একসময় খুব বিখ্যাত ছিল। যদিও এখন কিছুটা জৌলুস কমলেও এর ঐতিহ্য আজও অমলিন। এই বাড়িতে দেবীর আরাধনা এক সময়ে ঘটা করে করা হত। এখানকার প্রতিমা এবং পুজোর প্রথা খুবই পুরনো। যাঁরা একদম সাবেক প্রথা এবং পুরনো ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে চান, তাঁদের জন্য এই বাড়িটি অবশ্যই দেখার মতো।
আরও পড়ুনঃ মহা সমস্যায় পর্যটকরা! তারাপীঠে নয়া নিয়ম
৪. ভদ্রকালীর চাটুজ্জে বাড়ি
হুগলির ভদ্রকালী অঞ্চলে অবস্থিত চাটুজ্জে বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এই পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ প্রাচীন রীতিতে। এমনকী পুজোয় ব্যবহৃত অনেক কিছুই আজও পুরনো প্রথা মেনেই তৈরি হয়। এখানে এক অন্যরকম শান্তিপূর্ণ এবং ভক্তির পরিবেশ বিরাজ করে।
৫. শ্রীরামপুরের গোস্বামী বাড়ি
শ্রীরামপুরের গোস্বামী বাড়ির পুজো প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো। এখানে পুজোতে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশ– এই পঞ্চদেবতার প্রতিমা এক চালচিত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়। এই বাড়ির পুজোতে এখনও অনেক পুরনো নিয়ম-কানুন মেনে চলা হয়। প্রতি বছর এই পুজোয় অনেক দর্শনার্থীর ভিড় হয়।
এই পুজোগুলি দেখার জন্য কিছুটা সময় হাতে রাখা জরুরি, কারণ এই বাড়িগুলোর পুজো শুধু দেখার বিষয় নয়, এটি এক ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। যাঁরা পুজোর ভিড় থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বাংলার আসল ঐতিহ্য অনুভব করতে চান, তাঁদের জন্য হুগলি জেলার এই বনেদি বাড়ির পুজো দর্শন এক অসাধারণ সুযোগ।