কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
মাকে সাহায্য করলে স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি দুধ দেয় ৩ বছরের ‘মিল্কম্যান’, সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন এই খুদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে সিকিম গেলে!
বাচ্চা মানেই মায়ের ওপর নির্ভরশীল। মা ছাড়া এক পা-ও এদিক ওদিন ভাবাই যায় না। নিজে হাতে খাওয়া, একা ঘুমনো এসব এদেশে হয় না- বাঙালি বাড়িতে এই কথা খুবই কমন। সমতলে বিশেষ করে শহরে এসব শুনে অভ্যস্ত আমি আপনি অনেকেই। কিন্তু গ্রাম বা পাহাড়ের জীবনে এমনটা হয় না। এজীবন সেখানে স্বপ্নের মতো, এজীবন বাঁচার সাহসই দেখায় না কেউ।
আরও পড়ুনঃ চিকেনস নেকে বড়সড় নাশকতার ছক! বাগডোগরার সেনা ছাউনিতে বাংলাদেশি ‘চর’
২০২৫ সাল যখন প্রযুক্তি এত উন্নত, বড় বড় সংস্থা থাবা বসিয়েছে বাজারে সেখানে অনেকেই মনে করেন পাহাড়ের জীবন অনেক সহজ হয়েছে। পাহাড়ে আর আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। একথা মোটেও ঠিক নয় তা প্রমাণ করল ৩ বছরের সুয়াওম লেপচা। এযুগেও সে পিছিয়ে। ইদুর দৌড় থেকে অনেক দূরে সিকিমের একটা ছোট্ট গ্রামে বসে দিন-রাত মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে।
ছোট্ট ছোট্ট হাতে কখনও মায়ের টুকটাক সাহায্য, কখনও এটা ওটা এগিয়ে দেওয়া। মায়ের মুখে হাসি ফোটানো একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য পূরণেই রোজ সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দেয় সে। পাহাড়ে ঢাল, আল পথ পেরিয়ে বাড়ি বাড়ি দুধ দিতে যায় রোজ। একাজে ছুটি নেই, আছে শুধুই শান্তি, প্রশস্ত হাসি আর গুচ্ছ গুচ্ছ মিষ্টি কথোপকথন।
ছোট্ট ছোট্ট পা, ছোট্ট দুটো হাত একটা বড় ব্যাগ সামলানোর জন্য যথেষ্ট নয় তাই আলো ফুটলেই বোতল ব্যাগে ভরে মাথায় তার হ্যান্ডেল জড়িয়ে হাঁটা দেয় সে।
কখনও রাস্তা পিচ্ছিল হয়, কখনও বোতলের ওজন বেশি হয়ে যায়, কিন্তু সে থামে না। সে শুধু চায়, মা সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করে তাই সকাল সকাল সে ঘুমোক, বিশ্রাম নিক। মা বিশ্রাম করে আর সে মহানন্দে কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ ২১ নম্বর আর এন মুখার্জি রোড, ঘিঞ্জি এলাকা, ধোঁয়ায় দৃশ্যমানতা শূন্য; ডালহৌসিতে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড
পাহাড়ের জীবন! বাবাকে অনেক দূরে কাজে যেতে হয়, ফিরতে পারে না বেশিরভাগ দিনই। সে মায়ের সঙ্গে দিব্যি কাটিয়ে দেয়, আর মা যাতে একটু হাসতে পারে, তাই কাজ করে চলে।
কীভাবে পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের এই খুদের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে? তার কথায়, শিক্ষিকা নিমকিপু ম্যাম একদিন দেখতে পায় এমন কাজ করতে। দৌড়ে পালানোর আগেই ভিডিও করে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন।
ব্যাস! ম্যাজিক হয়ে যায় মা-ছেলের জীবনে। দেশ-বিদেশ থেকে সবাই তাকে দেখে এখন। অনেকে নাম দিয়েছে ‘দ্য লিটল মিল্ক ম্যান’। এই নাম একরত্তির খুবই পছন্দ। শুনলেই হেসে দেয়।
এই সোশ্যাল মিডিয়া পাল্টে দিয়েছে তাদের অনাড়ম্বর জীবন। সবাই ভালবেসে এখন তার জন্য এখন স্কুল ব্যাগ পাঠায়, কেউ জামাকাপড়, পড়ার জন্য টুকটাক টাকা পয়সাও পাঠায়।
এই সব কীভাবে হল, কীভাবে হয় সেসব বোঝার বয়স তার হয়নি। সে শুধু বোঝে সবার ভালবাসা। বলে, ‘আমি আগে কখনও খেলনা দেখিনি। খেলিনি ওসব নিয়ে কিন্তু এখন সবাই পাঠায় আমি খেলি। আর ওগুলো বাক্স থেকে বের করতে গিয়ে মা কেঁদে ফেলে। আমি সোশ্যাল মিডিয়া বুঝি না, খুব ছোট তো! শুধু জানি, ভাল মানুষেরা যখন আমার ভিডিও দেখে তখন ওরা আমায় ভালবাসে আর তাই আজ আমার জীবন অনেকটা পাল্টে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়া অনেকেরই জীবন পাল্টে দিতে পারে।’





