Tuesday, 17 June, 2025
17 June, 2025
HomeকলকাতাSSC Recruitment Case: 'লাশের ওপর হবে বিধানসভা ভোট',  হুঁশিয়ারি চাকরিহারাদের

SSC Recruitment Case: ‘লাশের ওপর হবে বিধানসভা ভোট’,  হুঁশিয়ারি চাকরিহারাদের

চাকরিহারারা জানিয়ে দিয়েছেন, চাকরি না-ফেরানো হলে তাঁরা চরমপন্থী আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। গণ-আত্মহত্যা করবেন তাঁরা।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

‘আমাদের লাশের ওপর বিধানসভা ভোট হবে!’ আজ সোমবার নেতাজি ইনডোরে চাকরিহারারা সভা করবেন। সেখানে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তার আগে রবিবার চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন চাকরিহারাদের একাংশ । শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একজোট হয়ে রাস্তা বের করতে বললেন তাঁরা। নাহলে ২০২৬-এর নির্বাচন কেউ লড়তে পারবেন না বলে ‘সতর্ক’ করলেন সকলে।

চাকরিহারাদের হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের রাস্তা বের করে না দিলে বিধানসভা নির্বাচন কাউকে লড়তে দেব না। আমাদের লাশের ওপর দিয়ে নির্বাচন লড়তে হবে।’ তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের কাছে মৃত্যুদণ্ডের সমান। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যদি কেউ সমাধান না বের করতে পারে  তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন তাঁদের লাশের ওপর দিয়ে হবে!

সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন চাকরিহারারা। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, অযোগ্যেরা থাকলে তাঁরা বৈঠক বানচাল করে দেবেন। চাকরিহারারা এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, চাকরি না-ফেরানো হলে তাঁরা চরমপন্থী আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। গণ-আত্মহত্যা করবেন তাঁরা।

২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে চাকরি চলে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। তাঁদের একাংশের সঙ্গেই সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন থেকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা বঞ্চিত শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন, তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, আমি যাতে তাঁদের কাছে যাই। কথা শুনতে তো কোনও দোষ নেই। আমি তাঁদের কথা শুনতে যাব এবং বলতে যাব, ধৈর্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না।’’

মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাওয়া নিয়ে জেলায় জেলায় দ্বিধাবিভক্ত চাকরিহারারা। অনেকেরই বক্তব্য, রাজ্য সরকারের জন্যই তাঁদের এই পরিণতি। ফলে, মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার মানে হয় না। অনেকে আবার বলছেন, এই সঙ্কটে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান যদি কোনও দিশা দেখাতে পারেন, সেই ভরসাতেই যাবেন। রবিবার সন্ধ্যায় শহিদ মিনারের পাদদেশের বিক্ষোভমঞ্চ থেকে শিক্ষকদের ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ ২০১৬’ জানিয়ে দিয়েছে, তারা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবে। সেখানে বিচার চাইবে তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য তারা বিশেষ পাসের ব্যবস্থাও করেছে।

সংগঠনের তরফে চাকরিহারা শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু আমরা নই, সব ক’টি রাজনৈতিক দলই একমত যে, রায় সঠিক হয়নি। সিবিআই আদালতে নথি জমা দিয়েছিল। কিন্তু তা মান্যতা পেল না। ওএমআর-এর মিরর ইমেজ যে পাওয়া যায়নি, এর দায় তো শিক্ষকদের নয়। প্রমাণ ছাড়া কোনও রায় হতে পারে কি? মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইতে যাব। বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস, সিপিএম সবাই বলছে যে, তারা আমাদের পাশে আছে। রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। আমাদের মধ্যে কারা বৈধ, কারা অবৈধ, তা পৃথক করা হোক। ’’

চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রশ্ন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে সময় নেয়। আমাদের কিন্তু এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হল।’’ তাঁদের হুঁশিয়ারি, তাঁদের সমস্যার সমাধান না হলে কোনও রাজনৈতিক দলকে তাঁরা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে দেবেন না। মেহেবুব বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, আমরা টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি। ওঁর অনেক ক্ষমতা আছে। অনেক আইএএস আধিকারিক রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে বিহিত করুন। আমরা রাজ্য সরকারের কর্মচারী। আমরা চাকরি হারিয়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছি। আগামী দিনে যাতে চাকরি করতে পারি, মুখ্যমন্ত্রীকে নিশ্চিত করতে হবে।’’

আরও পড়ুন: শুক্লা দশমীতে ধৃতি যোগের কামাল, সপ্তাহের প্রথম দিন মহাদেবের কৃপা পাবেন

প্রয়োজনে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে সর্বদল বৈঠক করে মীমাংসা করারও দাবি জানিয়েছেন চাকরিহারারা। তাঁদের বক্তব্য, এ সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুরও আবেদন জানাবেন। চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের রেখে অযোগ্যদের সরানো হোক। এর জন্য কোথাও কোনও অর্থ দিতে পারব না। এমন প্রস্তাব দিলে মানব না আমরা। আমাদের পরীক্ষায় বসতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার পরেও যে বিচার পাব, তার বিশ্বাস কী?’’

আর এক চাকরিহারা শিক্ষক ধৃতিশ মণ্ডল বলেন, ‘‘৫০০ বছর আগে কোথায় মন্দির-মসজিদ ছিল, তা বার করে ফেলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিচারপতি পাঁচ বছর আগের পরীক্ষার ফল খুঁজে পাচ্ছেন না? নিয়োগপত্রে লেখা থাকে, নিজে কোনও দোষ করলে চাকরি যাবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা কী দোষ করলাম জানি না। যে পদে যে অবস্থায় ছিলাম, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। যত দিন সেই ব্যবস্থা হচ্ছে না, তত দিন যাতে বেতন চালু থাকে। আজ থেকে রাস্তায় নামলাম। সুপ্রিম কোর্টকে অনেক লাশ দেখতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, এসএসসির নিয়োগে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টে প্রমাণিত। কিন্তু কারা যোগ্য প্রার্থী আর কারা অযোগ্য প্রার্থী, তা বাছাই করা যায়নি। সেই কারণেই আদালত গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু চাকরিপ্রার্থীকে ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তদন্তে নেমে প্রচুর সাদা খাতা উদ্ধার করেছিল সিবিআই। এ ছাড়া, অনেকে প্যানেলের বাইরে থেকে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। সেই ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকিদের চাকরি গেলেও বেতন ফেরত দিতে হবে না। নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন বিজেপি এবং সিপিএমকে। বিরোধীরা আবার শাসকদলকে দুষছেন।

গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই নবান্নে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। সেখানে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ-সহ রাজ্য সরকারের আমলা, আইনজীবীরাও হাজির ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। জানান, সোমবারের কর্মসূচিতে তাঁর সঙ্গে যাবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য এবং মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। সমাজের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টেরাও থাকবেন তাঁর সঙ্গে।

আরও পড়ুন: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ! PSU-এর জেলা কনভেনশনে

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য আগেই বলেছেন, ‘‘আমি কাউকে না যেতে বলব না। এই মহিলাই আপনাদের সর্বনাশের জন্য দায়ী।’’ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ২১ এপ্রিল যে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন, শুভেন্দু তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে দলও আগামী দিনে নবান্ন অভিযান করবে বলে জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার পাল্টা বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানবিক সরকার। নিয়োগকর্তা হিসেবে এই রকম পরিস্থিতিতে তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না বলেই বৈঠক ডেকেছেন।’’

যাঁরা চাকরি হারালেন, মমতার পাশে থাকার বার্তাকে তাঁদের অনেকেই অবশ্য ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী আরও আগে সক্রিয় হলে হয়তো এই পরিস্থিতি আটকানো যেত। মমতার সঙ্গে বৈঠকে এই চাকরিহারারা কী অবস্থান নেন, মুখ্যমন্ত্রীই বা তাঁদের উদ্দেশে কী বার্তা দেন, আপাতত সে দিকেই চোখ সকলের।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন