দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা:
আর দুদিন বাদেই রামনবমী। ইতিমধ্যেই রাম ভক্ত সহ সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উন্মাদনা তুঙ্গে পৌঁছে গেছে এই উৎসবকে ঘিরে। সকলেই অপেক্ষায় রয়েছে ৬ই এপ্রিলের। অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফ থেকেও জোরদার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যাতে কোনরকমের উস্কানিতে পা না দেন সাধারন মানুষ। যদিও বিরোধী দলগুলি ভিন্নমত জানিয়েছে। বিজেপি তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তুলেছে। সবমিলিয়ে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, সকলের আগ্রহই একেবারে অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে রামনবমী ঘিরে।
আরও পড়ুন: মীনাক্ষীর পদোন্নতি নিয়ে চর্চা! জনসমর্থন কেন ফিরছে না? পার্টি কংগ্রেসে উত্তর খুঁজছে সিপিএম
তবে রামনবমী ঘিরে এক বিশেষ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের তরফ থেকে। কি কর্মসূচি নিয়েছে তারা? সেদিন ‘রাত পাহারা’র ডাক দিয়েছে তারা। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে এই ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে ওদিন গোটা রাজ্যে ক্যাম্প তৈরি করা হবে রাত পাহারা দেওয়ার জন্য। এখানেই শেষ নয়, একেবারে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি এটাও জানিয়ে দিয়েছেন যে যে বা যারা দাঙ্গা পাকানোর ছক কষতে আসবে, তাদের সেই ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে যা শিখিয়ে গেছেন জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্য সম্পাদকের কথায় স্পষ্ট যে সেদিন এসএফআই সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু এত সবকিছুর মাঝেও একেবারে নিস্তব্ধ দেখা গিয়েছে বামফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ শরিক আরএসপি এবং তাদের যুব সংগঠন আরওয়াইএফকে। স্বাভাবিকভাবেই, তা রাজনৈতিক মহলে জন্ম দিয়েছে একাধিক প্রশ্নের। তাদের চুপ থাকায় অনেকে মনে করছেন যে মতপার্থক্য হতে পারে দুই দলের মধ্যে। আবার অনেকে মনে করছেন যে তেমনটা নাও হতে পারে। বলা যায়, বাম সমর্থকদের মধ্যে এক চাপা উত্তেজনা বা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে এই দূরত্বকে নিয়ে। তবে এবার এই বিষয়ে যাবতীয় সব সন্দেহ দূর করলেন আরওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক আদিত্য জোয়ারদার। বঙ্গবার্তার সঙ্গে একটি টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে তিনি দিলেন এই সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর।
আদিত্য বলেন, “দেখুন বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করছে, তা তৃণমূল কংগ্রেস আরও বৃহত্তর করছে। তবে বাংলার মানুষ এগুলিকে পশ্রয় দেবেনা এবং তাদের ফাঁদে পা দেবেনা। মানুষ এই চক্রান্ত ভেস্তে দেবে। এর আগেও যখন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বাংলায় দাঙ্গা হয়েছিল, তা থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” এরপর রামনবমীর দিন কর্মসূচি না রাখা প্রসঙ্গেও বক্তব্য রাখেন তিনি। আরওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, “কে বলেছে আমাদের কোন কর্মসূচি নেই? আমাদের কর্মসূচি মানে এই না ঘোষণা করে দাঙ্গা ঢুকতে হবে। যখন, যে মুহূর্তে, যেই পরিস্থিতি তৈরি হবে তখন সংগঠন মাঠে নেমে তার মোকাবিলা করবে। এমন নয় যে সবকিছু ঘোষণা করেই করতে হবে।”
আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে নির্দেশিকা! ব্যানার-হোর্ডিং ভরিয়ে দিতে হবে
অবশেষে আদিত্য জোয়ারদারকে, আরএসপিকে বামফ্রন্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কি দিচ্ছেনা, সেই বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “দেখুন জানিনা আপনাকে কে এই খবরটা দিয়েছে যে বামফ্রন্ট আমাদের পাত্তাই দিচ্ছেনা। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের আলাদা নিজস্ব কর্মসূচি যেমন আছে তেমনি যৌথ কর্মসূচিও আছে। যেমনি আরজি কর ইস্যু থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের সময় সন্ত্রাসের ইস্যু, এই সব বিষয়গুলিতে আমরা কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছি। তৃণমূল-বিজেপির জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। মাদুরাইতে যে সিপিএমের অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস আয়োজিত হয়েছে, সেখানে সমস্ত প্রগতিশীল দল, বিশেষ করে বামপন্থী দলগুলি উপস্থিত ছিল। সকলেই ঐক্য গড়ে তোলার এই আন্দোলনে এক হয়ে লড়ছে। বামফ্রন্ট যেই ইস্যুর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল, মানুষের সেই আন্দোলনকে আমরা শক্তিশালী করার জন্য লাগাতার কাজ করে চলেছি।”