সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওঁরা আজ চাকরিহারা! সরকারি ভাবে এখনও বরখাস্তের চিঠি মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশ থেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন স্কুলে যাওয়ার জন্য। মঙ্গলবার কেউ কেউ স্কুলে গিয়েছেন। কেউ আবার ঘণ্টাখানেক স্কুলে কাটিয়েই ফিরে এসেছেন। এই যেমন শিলিগুড়ির অনামিকা রায়। প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে জুটেছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে তাঁরও! তবুও মঙ্গলবার দ্বিতীয়ার্ধে স্কুলে গিয়েছেন তিনি। স্কুলে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার হলে ‘গার্ড’ দেন তিনি। তাঁর মতো আরও কয়েক জন স্কুলে গিয়েছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মানলেন না চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি বড় অংশ। জেলায় জেলায় এমনই টুকরো টুকরো ছবি ধরা পড়ল মঙ্গলবার।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের নিমিকি হাই স্কুলে দু’জন চাকরিহারা শিক্ষক গিয়েছিলেন। তবে স্বল্প সময়ের জন্যই। পড়ুয়াদের ক্লাস নেননি। ৩০-৪০ মিনিট ছিলেন স্কুলে। প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে আবার ফিরে গিয়েছেন। জেলার আরও বেশ কিছু স্কুলে খোঁজখবর নেওয়া হয়। ওই স্কুলগুলিতে কোনও চাকরিহারা শিক্ষক কাজে যোগ দেননি। কেউ কেউ প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। স্কুলে যেতে চান, সে কথাও জানিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার যাননি। পূর্ব মেদিনীপুরে এলাকাভিত্তিক কিছু কিছু স্কুলে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই স্কুলগুলিতে চাকরিহারা শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের কেউই স্কুলে যাননি। একই ছবি ধরা পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। সেখানে স্কুলে না-গিয়ে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান চাকরিহারাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ নয়, তাঁরা যাতে চাকরি করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হোক। মেদিনীপুর শহরে কলেজ মাঠে জমায়েতের পর মিছিল করে জেলা কালেক্টরেট মোড় পর্যন্ত যান তাঁরা। সেখানে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধও করেন।
আরও পড়ুন: চরমে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল! সাংসদদের নিয়ে কল্যাণের মন্তব্য শুনেই অ্যাকশন শুরু মমতার
পশ্চিম বর্ধমানে দু’-একটি স্কুল বাদ দিলে কোনও স্কুলেই চাকরিহারা শিক্ষকেরা কাজে যাননি বলে জানা যাচ্ছে। যেমন, রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজ হাই স্কুলে দুই শিক্ষকের নাম ছিল ২০১৬ সালের প্যানেলে। তাঁরা অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও স্কুলে হাজির হয়েছেন। ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক তাপসকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, যে হেতু তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি, তাই স্কুল চললে ক্লাসেও হাজির হচ্ছেন ওই শিক্ষকেরা। তবে আগামী দিনে তাঁরা কী করবেন, তাঁদের বেতন কাঠামো সঠিক থাকবে কি না, সে সব কিছুই জানেন না প্রধানশিক্ষক
বীরভূম জেলাতেও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেশির ভাগই স্কুলে অনুপস্থিত। বীরভূমের নানুর ব্লকের নানুর টিকেএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষিকা ও এক জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। স্কুলে মোট ১২ জন শিক্ষিকা ছিলেন। আপাতত আট জনই কোনও রকমে পঠনপাঠন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু এই একটি স্কুল নয়, খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় নানুর, লাভপুর ব্লক-সহ জেলার সর্বত্র অধিকাংশ স্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলেই আসেননি। মুর্শিদাবাদে আবার বেশ কিছু স্কুলে হাজির থাকতে দেখা গেল চাকরিহারা শিক্ষকদের। যেমন রঘুনাথগঞ্জ সেকেন্দ্রা হাইস্কুলে দু’জন শিক্ষক ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় চাকরি পান। তাঁদের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত চাকরি বাতিলের বিষয়ে লিখিত ভাবে তাঁরা কোনও নথি পাননি। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর সোমবারের আশ্বাসের উপরেও ভরসা রাখতে চাইছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: শুক্লা দ্বাদশীতে বৃদ্ধি যোগ-মঘা নক্ষত্র, আজ কি পকেট ফাঁকাই থাকবে? কী বলছে আপনার ভাগ্যচক্র
হুগলি জেলার বিভিন্ন স্কুলে যোগাযোগ করে জানা যায়, চাকরিহারাদের উপস্থিতি অনেকটা কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী চিত্রও ধরা পড়েছে। কেউ কেউ ‘স্বেচ্ছাশ্রমে’ রাজি হয়েছেন। যেমন রিষড়ার বিদ্যাপীঠ ইউনিট-টু হিন্দি মাধ্যম স্কুলের ১৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ১২ জনই চাকরি হারিয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁদের মধ্যে আট জনই স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বাকি চার জনও স্কুলের কাজেই ছিলেন। তবে তাঁরা চাইছেন, যেন বেতন বন্ধ না-হয়ে যায়। কত জন স্কুলে গিয়েছেন, কত জন যাননি, সেই বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও তথ্য মেলেনি। তবে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক সংগঠনের হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শুভেন্দু গড়াইয়ের দাবি, হুগলি জেলার চাকরিহারা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং অনেকেই স্কুলে যোগ দিচ্ছেন।
শিলিগুড়ির অনামিকা মঙ্গলবার স্কুলে গেলেও, দার্জিলিং জেলার সমতল এলাকার অন্য স্কুলগুলিতে বেশির ভাগ চাকরিহারাই এখনও কাজে যোগ দেননি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও মঙ্গলবার স্কুলগুলিতে চাকরিহারা শিক্ষকদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। জেলার স্কুল পরিদর্শন (মাধ্যমিক) দেবাশিস সমাদ্দার জানান, দিনভর অনেক প্রধানশিক্ষক তাঁকে ফোন করেছেন। চাকরিহারা শিক্ষকদের কেউ কেউ স্কুলে ফিরে খাতায় সই করতে চেয়েছেন। যদিও জেলা শিক্ষা বিভাগ সূত্রে খবর, চাকরিহারাদের অধিকাংশই মঙ্গলবার কাজে যোগ দেননি। এর একটি অন্যতম কারণ হতে পারে চাকরিহারাদের একটি বড় অংশ সোমবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোরের সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির ক্ষেত্রে চাকরিহারাদের স্কুলে উপস্থিতির হার মঙ্গলবার পুরোপুরি স্পষ্ট না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।