এআই-নির্ভর কোডিং ব্যবস্থার দিকে জোরকদমে এগচ্ছে মাইক্রোসফট। এআই যত উন্নত হচ্ছে, তত মানুষের প্রয়োজন কমছে। সে কথা আবারও প্রমাণিত হল। যারা এআই ব্যবহার করে কাজের সংখ্যা বাড়ালেন, তাদেরই ছেঁটে দিল একাধিক সংস্থা। তালিকায় রয়েছে মাইক্রোসফটও।
সম্প্রতি এই সংস্থায় গণছাঁটাই হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা। এক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, এই টেক জায়ান্ট বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। কিন্তু ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র ওয়াশিংটন রাজ্যেই এই ছাঁটাইয়ের ৪০ শতাংশের বেশি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়রদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, ছাতেন থেকে ফেরার আশায় ৬৩ জন পর্যটক
উদ্বেগের বিষয় হল, যারা ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেককেই কয়েক মাস আগে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এআই টুলের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য। নিজস্ব কোড লেখার পরিবর্তে OpenAI-এর চ্যাটবটের সহায়তায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কোড জেনারেট করার জন্য বলেছিল সংস্থা। আগে যেখানে এই এআই-নির্ভর কোডিং ছিল মোটামুটি ২০-৩০ শতাংশ, সেখানে এই হঠাৎ নির্দেশের কিছু সপ্তাহের মধ্যেই বহু ইঞ্জিনিয়র কাজ হারান। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁরা কি নিজেরাই নিজেদের বদলি তৈরি করলেন?
দ্য ইনফরমেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেফ হালসে, যিনি প্রায় ৪০০ জন ইঞ্জিনিয়রের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর দলকে এই এআই ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর ঠিক সেই দলই পরে ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়ে। কোম্পানির সিইও সত্য নাদেলা যদিও এআই ব্যবহারে উচ্ছ্বসিত এবং দাবি করেছেন কোম্পানির বেশ কিছু প্রকল্পে এখন এক-তৃতীয়াংশ কোড এআই দিয়েই লেখা হচ্ছে, এতে প্রোডাক্টিভিটি বেড়েছে। তবে যাঁরা হঠাৎ করেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের কাছে এটি কর্পোরেট বাস্তবতার এক নির্মম রূপ।
আরও পড়ুন: বাংলার ঘরে ঘরে জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ পৌঁছবে রথের আগেই
শুধু জুনিয়র ইঞ্জিনিয়রদের কাজ গেছে এমন নয়, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট এবং এমনকি এআই প্রকল্পে নিযুক্ত কর্মীরাও বাদ যাননি এই ছাঁটাইয়ের হাত থেকে। মাইক্রোসফটের এআই ফর স্টার্টআপ-এর ডিরেক্টর গ্যাব্রিয়েলা দে কুইরোজ নিজেই ছাঁটাই হয়েছেন বলে জানান। বলেন, ‘এপ্রিয় সত্য হলেও এটাই বাস্তব। আমার সেই সহকর্মীদের জন্য দুঃখ হচ্ছে যাঁরা ভীষণ আন্তরিক ছিলেন, নিজের সেরাটা দিয়েছেন এবং সত্যিই কাজের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠ ছিলেন।’
এই ছাঁটাইয়ের মধ্যে ম্যানেজার শ্রেণি বিশেষভাবে বাদ পড়েছেন বলেই দেখা গিয়েছে। ওয়াশিংটনের ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ ছিলেন ম্যানেজার, যা কোম্পানির সামগ্রিক ম্যানেজার পদের কর্মীর অনুপাতের সঙ্গেও মিলে যায়। মাইক্রোসফট অবশ্য দাবি করেছে, এটা মূলত ম্যানেজমেন্ট স্তরের পুনর্গঠন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল খরচ কমানো — বিশেষত এআই খাতে বিপুল বিনিয়োগ, ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণ এবং ওপেন এআই-এর সঙ্গে চুক্তির পর খরচ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন ছিল।
এই ছাঁটাইয়ের পর শুধু হতাশা নয়, ক্ষোভও জন্ম নিয়েছে প্রচুর। সম্প্রতি মাইক্রোসফটের বিল্ড ২০২৫ ইভেন্টে জো লোপেজ নামে এক কর্মী গোটা বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের মাঝেই সরকারের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফটের প্রাক্তন অনেক ইঞ্জিনিয়র বলছেন, সবচেয়ে যন্ত্রণার বিষয় হল, যারা নিজেরা কোম্পানিকে এআই-নির্ভর প্রযুক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করেছেন, আর সেই প্রযুক্তিই তাঁদের চাকরি কেড়ে নিয়েছে।
ফলে এই ঘটনা প্রযুক্তি জগতে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে — এআই কি ভবিষ্যতের পথ, না কি মানুষের পেশার ভবিষ্যত কেড়ে নেওয়ার হাতিয়ার?