তিনি বাংলাদেশের জনক। তাঁর নেতৃত্বেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন না। অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু-সহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি কাড়ল মহম্মহ ইউনূসের সরকার। বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে মঙ্গলবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হল। আর সেই অধ্যাদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু-সহ চার শতাধিক নেতা।
শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ-সহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। অধ্যাদেশে এসব নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রক থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: সুখাদ্যের বেশে কুখাদ্যের রমরমা! রেস্তোরাঁয় খাচ্ছি বটে, কিন্তু জানছি কি!
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রতিনিধি নন, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূত-সহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
বাতিল হওয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-সহ প্রবাসী সরকারের এমএনএ কিংবা এমপিএ এবং উল্লেখিত চার শ্রেণির সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী এখন তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পরিচিত হবেন। গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার শর্তে খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এবার রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠন কার্যত অভিভাবকহীন! শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন প্রাক্তন বিধায়ক শংকর মালাকার
গত বছরের অগস্টে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর পদ্মাপারের দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেইসময় বঙ্গবন্ধুর মূর্তিও ভাঙতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের টাকার নোট থেকেও মুজিবুরের ছবি সরানো হয়। এবার বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও কেড়ে নিল ইউনূসের সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল নিয়ে বাংলাদেশে শোরগোল পড়েছে।